মানসিক রোগ
মানসিক রোগের লক্ষণ ঃ
প্রত্যক্ষকরণ বা উপলদ্ধি: ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা সব কিছু প্রত্যক্ষ করে থাকি। এই প্রত্যক্ষকরণ বা উপলদ্ধিতে অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পেলে সেটাকে মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উপলদ্ধিগত অস্বাভাবিকতা দুধরনের হতে পারে – ইল্যুশন ও হ্যালুসিনেশন।
আবেগের অস্বাভাবিকতা: একজন সুস্থ ব্যক্তি এবং একজন অসুস্থ ব্যক্তি একই উপায়ে তাদের আবেগ অনুভব প্রকাশ করতে পারে না। বিভিন্ন কারণে আবেগের পরিবর্তন ঘটে – তবে সেই পরিবর্তনকে স্থায়ী বলা যায় না। যাদের পরিবর্তনটা স্থায়ী হয়ে পড়ে তারা মানসিকভাবে অবশ্যই বিপর্যস্ত। কিছু কিছু বিষয় আবেগের অস্বাভাবিকতার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। যেমন: বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা, বিরক্তি।
বুদ্ধি লোপ: মানসিক রোগীদের বুদ্ধি লোপ পায়। একটি জিনিসকে বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লষণ করার ক্ষমতা তাদের কমে যায়।
স্মৃতিভ্রষ্ট: একটি লোক কোথা থেকে আসছে জিজ্ঞেস করলে ভিন্ন উত্তর পাওয়া যায়। সে ইচ্ছে করে মিথ্যে বলে না। আসলে সে নিজেই সব ভুলে যায়।
মুদ্রাদোষ: একই কথা বার বার বলা, একই অঙ্গ বার বার সঞ্চালন করাকে মুদ্রাদোষ বলে। মানসিক রোগীদের মধ্যে এই উপসর্গগুলো পরিলক্ষিত হয়।
মানসিক জটিলতা: এটা এমন এক অবচেতন ধারনা যা আবদমিত ইচ্ছা বা আবেগজনিত অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত এবং আচরণে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যেমন: সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স, ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স, ইলেকট্রা কমপ্লেক্স, ঈপিডাস কমপ্লেক্স ইত্যাদি।
সন্দেহপ্রবণতা: মানসিক রোগীদের মধ্যে মারাত্মক সন্দেহপ্রবণতা দেখা যায়। বন্ধুদের বা আশেপাশের মানুষদের সে শত্রু বলে মনে করে। তার বিরুদ্ধে সবাই চক্রান্তে লিপ্ত এমনটি সে মনে করে।
অহেতুক ভয়: মানসিক রোগীরা অহেতুক ভয়ের শিকার হতে পারে। অনেকে ছোট ও নিরীহ প্রাণী দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অন্ধকার বা নির্জনতায় আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে অন্যের সামনে কথা বলতে পারে না।
অহেতুক রোগভীতি: রোগী মনে করে সে কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে।
শুচিবাই: মানসিক রোগীদের মধ্যে শুচিবায়ুগ্রস্ততা পরিলক্ষিত হয়। কেউ ঘন্টার পর ঘন্টা হাত-মুখ ধুচ্ছে তো ধুচ্ছেই – মনে হয় তারপরও ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না।
চিকিৎসাঃ
জৈব বা জৈব রাসায়নিক কারণে যদি মানসিক রোগ হয় তবে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। অন্যদিকে ধরুন যদি সাংসারিক অশান্তি, পিতা-মাতার গোলমাল কিংবা স্কুলের চাপের কারণে মানসিক রোগ দেখা দেয় তা হলে চিকিৎসার সময় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ধরণের রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি তাকে আচরণগত বিষয় উপদেশ দিতে হবে। তার সাইকো থেরাপি বা বিহেভিয়ার থেরাপির দরকার হবে।
মানসিক রোগ প্রতিহত করাও সম্ভব। রোগের বায়োলজিক্যাল ও জেনেটিক কারণগুলো খতিয়ে দেখার মাধ্যমে তা করা সম্ভব। সন্তান জন্মের আগে এমন ব্যবস্থা করা সম্ভব। করা সম্ভব সন্তান জন্মের পরও। এ ছাড়া, অন্যদিকে রোগীর পুনর্বাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ওষুধসহ সাইকো বা বিহেভিয়ার থেরাপির মাধ্যমে যে রোগীর রোগ মুক্ত হলো সে যেন পুরনো কাজে ফিরে যেতে পারে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই নিশ্চয়তাটি চিকিৎসার জন্য বেশ প্রয়োজনীয় তা মনে রাখতে হবে।
মনোরোগ দেহের রোগের মতই একটি রোগ, সে সম্পর্কে এই অ্যাপ হতে আমরা সবাই নিশ্চিত হতে পেরেছি। তাই কারো মনোরোগ হয়েছে শুনলে তাকে মানসিক ডাক্তার দেখাবেন। একাজে ভয়, লজ্জা বা শরমের কিছু নেই।