দরজায় কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। খিড়কি খুলে বিশ্বকাপকে সাদর সম্ভাষণ জানানোর প্রস্তুতিটা সারছে বাংলাদেশ। খেলেছে প্রস্তুতি ম্যাচ। সাকিব আল হাসান সে প্রস্তুতিতে নেই। তিনি দলের সঙ্গেই নেই। সাকিব ব্যস্ত আইপিএলে।
বিশ্বকাপের আগে তাই বাংলাদেশ দলের সেরা একাদশ দেখা সম্ভব হয়নি। সমর্থকদের মধ্যে এ নিয়ে অস্বস্তি আছে, কিছুটা আক্ষেপও আছে। কিন্তু এ নিয়ে সাকিবের ভাবলে চলে?
সাকিব বরং ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফুটবলে উরুগুয়ে অধিনায়ক ওবদুলো ভ্যারেলার উক্তি মনে করতে পারেন। মারাকানায় লক্ষাধিক ব্রাজিল সমর্থকের সামনে দল নিয়ে মাঠে ঢুকতেই দর্শকদের বজ্রনিনাদে ভীতির সঞ্চার ঘটেছিল উরুগুয়ে দলে। অভয় দিয়ে ভ্যারেলা তাঁর সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘ভেবো না, গ্যালারির কেউ খেলবে না।’
সত্যি বলতে মাঠের কাজটা খেলোয়াড়ের। আর সাকিব নিজেই বলেছেন আইপিএলই বিশ্বকাপের সেরা প্রস্তুতি। দলের সেরা খেলোয়াড় বিশ্বকাপের জন্য যত ভালোভাবে প্রস্তুত হবেন, দলের জন্য তত ভালো। বলা হচ্ছে, আইপিএল দিয়ে সাকিবের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিটা হয়ে গেছে। আসলেই কি তা–ই?

সাকিবের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির প্রসঙ্গে সবার আগে উঠে আসে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ৮৬.৫৭ গড়ে সে বিশ্বকাপে ৬০৬ রান করা সাকিব অনেকের বিচারেই ছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। শুধু কি তা–ই, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হতে না পারলেও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ শিরোনাম করেছিল, ‘বাংলাদেশ তারকা সাকিব আল হাসান কেন অবিসংবাদিতভাবে ২০১৯ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়।
ব্যাট হাতে তখন সম্ভবত জীবনের সেরা ফর্মে থাকা সাকিব সে বিশ্বকাপের আগে আইপিএলে খেলেছিলেন মাত্র ৩ ম্যাচ। ৯ রানের পাশাপাশি উইকেট নিয়েছিলেন ২টি। আইপিএলের এ পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই সে বিশ্বকাপে সাকিবের প্রস্তুতির পক্ষে কথা বলে না।
কিন্তু খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি কি পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করা যায়? কিংবদন্তি ক্রিকেট লিখিয়ে স্যার নেভিল কার্ডাস হয়তো এসব ভেবেই বলেছিলেন, ‘পরিসংখ্যান আস্ত গাধা!’
সাকিবের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও কথাটি খাটে। শুধু সাকিব কেন, পৃথিবীর তাবৎ খেলোয়াড়দের প্রস্তুতিই আসলে অন্তর্নিহিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পান আর না পান, খেলোয়াড় নিজেই বুঝতে পারেন, তাঁর কাজটা হচ্ছে কি না। এসব ক্ষেত্রে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের সঙ্গে থাকা, ম্যাচ পরিস্থিতি, নেট অনুশীলন, ড্রেসিংরুমের পরিবেশ—খুব কাজে দেয়। তাতেও সন্তুষ্ট হতে না পারলে সাকিবের মতো খেলোয়াড়েরা বিকল্প বেছে নেন।

২০১৯ বিশ্বকাপের আগে যেমন ‘গুরু’ ও প্রিয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে ভারতে ডেকে নিয়ে আলাদা করে অনুশীলন করেছিলেন সাকিব। এর সঙ্গে আইপিএলের ম্যাচে সুযোগ না পাওয়ার কোনো সম্পর্ক ছিল না। সেই উদাহরণ যেহেতু চোখের সামনেই জ্বলজ্বল করছে, তাহলে এবারের আইপিএলে সাকিবের প্রস্তুতিতে তাকানো যাক।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার আইপিএল স্থগিত হওয়ার আগে টুর্নামেন্টটির প্রথম পর্ব হয়েছে ভারতে। তখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভারতেই হওয়ার কথা ছিল। আইপিএলের সেই পর্বে ৩ ম্যাচ খেলেছিলেন সাকিব।
আহামরি পারফরম্যান্স ছিল না—৩৮ রান ও ২ উইকেট। আইপিএলে খেলতে যাওয়ার আগে বিতর্কও হয়েছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের হয়ে টেস্ট না খেলে চলে যান ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। সাকিব এর জবাবে বলেছিলেন, ভারতে অনুষ্ঠেয় আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতেই আইপিএলে খেলা জরুরি মনে করেছেন।
কিন্তু পারফরম্যান্স ভালো না হওয়ায় সতীর্থদের জন্য তাঁর পানি-টাওয়েল টানার ছবি নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাতে সাকিবের মানসিকতায় চিড় ধরেনি