আইসিউইতে কথা বলার আকুতি, লিখতেও পারলেন না

ইনফি ইয়াসমিন (ববি) বললেন, ‘স্বামীকে নিয়ে ১০ দিন আইসিইউতে ছিলাম। যারা এখনো মনে করে যে করোনা কিছু না, তাদের একটিবার এক মিনিটের জন্যও যদি আইসিইউতে ঢুকিয়ে দেখাতে পারতাম, তাহলে বুঝতেন, করোনা কাকে বলে। বুঝতে পারতেন, মৃত্যুযন্ত্রণা কাকে বলে। আমারও বিশ্বাস ছিল, স্বামী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন, কিন্তু ফিরলেন না। আমাদের অনাগত সন্তান বাবার চেহারাটাও দেখতে পাবে না। আর ৯ বছরের ছেলে শুধু বলছে, “তুমি আমার আব্বুকে এনে দিতে পারলে না।”’

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা গেছেন ইনফি ইয়াসমিনের স্বামী শেখ সালাউদ্দিন। ইনফি ইয়াসমিন বর্তমানে আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ৯ বছর বয়সী ছেলেটা পড়ছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

আজ সোমবার কথা হয় ইনফির সঙ্গে। তিনি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না যে স্বামী মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে ইশারায় স্বামী তাঁকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কথা বলতে পারতেন না। তাই কাগজে লিখে কিছু বলতে চান কি না, তা জানতে চাইলে ইশারায় হ্যাঁ বলেছিলেন। কাগজ-কলম দিলে কিছু লেখার চেষ্টাও করেছিলেন, হাত কাঁপার জন্য লেখা স্পষ্ট হয়নি। স্বামী মারা যাওয়ার পর ইনফি সেই লেখাই ফেসবুকের কভার ফটো করে রেখেছেন।

আর ফেসবুকের প্রোফাইলে কোনো এক সময় ইনফি লিখেছিলেন, ‘একটা ছোট শান্তির নীড়, সেখানে প্রিয় কিছু মুখ, আর সেই মুখে হাসি, সাথে স্বস্তির ছোট্ট নিশ্বাস চাই।’ তবে ইনফির ছোট নীড়ের সব থেকে প্রিয় মুখটি হুট করেই হারিয়ে গেল। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে আতঙ্কে।

ইনফি ইয়াসমিন জানান, স্বামীর চিকিৎসার খরচসহ সব দিক সামলিয়েছেন তাঁর ননদ ও শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কর্মরত ইনফির বোনজামাই সাইফ উদ্দিন সরকারসহ অন্যরা সব সময় তাঁর পাশে ছিলেন। এখনো দুই পরিবারই পাশে আছে তাঁর।

ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ইনফি বলেন, ‘পেটের সন্তানটির ভাগ্যই হলো না তার বাবার ভালোবাসা পাওয়ার। ছেলেটি তার বাবার বুকে ঘুমাত। এখন এই ছেলেকে সামলানোও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সামনে কীভাবে এগোব বা ঘুরে দাঁড়াব, তা–ও বুঝতে পারছি না। আমার সব কাজের সহযোগী ছিলেন আমার স্বামী। আমার মনের শক্তিও ছিলেন তিনি। আমার বাবাকে হারানোর পর মা আর ছোট দুই বোনেরও দেখভাল করত ও। করোনায় তো সব শেষ হয়ে গেল।’

অসুস্থ হওয়ার পর থেকে স্বামী যে কষ্ট করে গেছেন, তা ভুলতে পারছেন না ইনফি। বললেন, ১০৫ ডিগ্রি জ্বরের পর এক চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হলে তিনি ডেঙ্গুসহ নানা টেস্ট দিলেন। কিন্তু এই চিকিৎসক করোনার টেস্ট দেননি। পরে শ্বাসকষ্টসহ অবস্থা খারাপ হলে স্বামীকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে দৌড়াতে হয়েছে। পরে বোনের স্বামীর সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয়। আইসিইউতে প্রতিমুহূর্ত কাটে আতঙ্কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *