মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট ১৯১৩ সালে আমাজন বনভূমিতে বৈজ্ঞানিক সফরে যান। কৌতূহল তাঁকে আমাজনের গভীর অরণ্যে নিয়ে যায়। সেখানে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উৎসর্গ করে গরু বলি দেয়। নদীতে গরুটি ফেলার সঙ্গে সঙ্গে নিমেষে কঙ্কালে পরিণত হয়। এই দৃশ্য রুজভেল্টকে ভীতসন্ত্রস্ত করে। পানিতে বুদ্বুদের সঙ্গে রক্ত ভেসে উঠলে হিংস্রতার রহস্য ভেদ হয়। ছোট অনেক মাছ গরুর মাংসের টুকরা মুখে নিয়ে এদিক–ওদিক ছুটছে। সফরের নাটকীয় বর্ণনা থেকে ‘পিরানা’ (একপ্রকার মাছ, পিরানহা নামেও পরিচিত) নামের এ মারাত্মক জীব বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিতি লাভ করে।সম্মিলিতভাবে অনেকগুলো পিরানা যেকোনো প্রাণীকে মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। পিরানা মানুষখেকো। অনেকগুলো পিরানা মিলে একটা আস্ত মানুষ খেয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু তারা সচরাচর মানুষকে আক্রমণ করে না।
বরং তারা অন্যভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করে। বড়শি ভেঙে, পুকুরের মাছ খেয়ে আর টোপ চুরি করে তারা জেলেদের বিব্রত করে। এ জন্য চীন, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশে পিরানা পালন নিষিদ্ধ।পিরানা আহার করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তা ছাড়া তারা দেশি মাছ খেয়ে পুকুরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে। তাই ২০০৮ সালে বাংলাদেশে পিরানা বিক্রি নিষিদ্ধ (প্রোটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ২০০৮) করা হয়। রূপচাঁদা মাছের সঙ্গে বাহ্যিক মিল থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ‘থাই চান্দা’ নামে পিরানা বিক্রি করে। এই সর্বভূক এই জীব ভিন্ন প্রাণীর মল আর মৃতদেহ খেয়ে বেড়ে ওঠে। কেজিতে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পিরানা বিক্রির অপরাধে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ আর ময়মনসিংহে পিরানা চাষের খবর পাওয়া গেছে।
রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে পিরানার আবিষ্কার পর্যটক আর এলাকাবাসীর মনে শঙ্কা সৃষ্টি করছে। পিরানার উপস্থিতি তাঁদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ধারণা করা হয় যে পিরানা নিষিদ্ধের আইন প্রণীত হলে একদল মৎস্য ব্যাপারী পুলিশের অভিযান থেকে বাঁচার জন্য লেকে সব পিরানা ছেড়ে দেয়। ইদানীং নিকটবর্তী পুকুরের অবৈধ চাষের পিরানাও বন্যায় ভেসে কাপ্তাই লেকে প্রবেশ করছে।
অনলাইনে কিছু প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে অ্যাকুয়ারিয়ামের জন্য পিরানা বিক্রি করছে। ফাঁদে পা দিয়ে অনেক তরুণ মাছ অপসারণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। একদিকে তাদের সহজে হাত দেওয়া যায় না, অন্যদিকে তাদের কোথাও ছেড়ে দেয়াও নিরাপদ নয়। এ জন্য প্রকৃতি, পরিবেশ আর নিরাপত্তার স্বার্থে পিরানার বহুমুখী কুপ্রভাবের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।