বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ‘মিনিসো’ লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডটি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়। দাম সাধ্যের ভেতর, মানে ভালো আর লুকটাও দারুণ—সব মিলিয়ে মিনিসো মধ্যবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্তদের পছন্দের ব্র্যান্ডগুলোর একটি। ২৪ ঘণ্টা আগেও বিশ্ববাসী জানত, এটি একটি জাপানি ব্র্যান্ড। হঠাৎ করেই মিনিসো ও মিনিসো স্পেনের পক্ষ থেকে জানানো হলো, এটি চীনা ব্র্যান্ড। এরপরই সাড়া পড়ে গেল সারা বিশ্বে। মিনিসোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা তাদের ‘সিরিয়াস মিসটেক’।
মিনিসো যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশে যাত্রা শুরু করে, তখন বলা হয়েছিল, এটি ‘ইননিক্লো’র মতোই একটি জাপানি ব্র্যান্ড। কেননা মিনিসো নানা ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রি করে। আর সেই সময় সারা বিশ্বে চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে বিশেষ করে চীনা ইলেকট্রনিক পণ্যের বিরুদ্ধে একটা মুভমেন্ট চলছিল। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব দেশের আঁতাত, তারাও চীনা পণ্য বর্জন করেছিল। ফলে পরিকল্পিতভাবেই মিনিসোকে জাপানি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
এখন কেন সত্যিকারের পরিচয় নিয়ে সামনে আসল? এর উত্তর দিয়েছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’। ব্রিটিশ এই পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মিনিসো ব্র্যান্ডটি অকল্পনীয়ভাবে সফল আর আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর প্রথমেই সরিয়ে দেওয়া হয় জাপানি ডিজাইনার সানাজাচুনকে। তবে এরপর থেকেও সানাজাচুনের দেখানো পথেই হাঁটছিল মিনিসো। কেবল চীনা সাংস্কৃতিক পণ্যের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছিল মিনিসো। এর মধ্যে দুই বছর চলে গেল মহামারিতে।
২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত সব মোটামুটি ঠিকই ছিল। এর ভেতর চীনে বাড়ছিল জাপানবিরোধী আন্দোলন। জুলাইয়ে মিনিসোর একটি পুতুলের গায়ে লেখা ছিল ‘ডিজনি প্রিন্সেস টয় ড্রেসড ইন চাইনিজ চিয়ংসাম’। কিন্তু পুতুলটি আসলে ছিল জাপানি ‘গেইসা ডল’। এতে করে চীনারা ব্যাপক খেপে ওঠে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ রকম পরিস্থিতির মুখে ইনস্টাগ্রাম থেকে ওই পুতুলের ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়। বাজার থেকেও দ্রুতগতিতে সরিয়ে নেওয়া হয় ওই পুতুল। কিন্তু আন্দোলন থামে না। চীনা জাতীয়তাবাদ ও ‘জাপানবিরোধী সেন্টিমেন্ট’–এর মুখে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা তাদের মার্কেটিং পলিসি থেকে সরে আসবে। ইচ্ছাকৃতভাবে করা ‘ভুল’ শুধরে নেবে।
তারপরই তারা ঘোষণা দেয়, তারা তাদের এই ভুলের জন্য গভীরভাবে দুঃখিত। আর একটা চীনা কোম্পানি হিসেবে তারা গর্বিত।
এদিকে এ ঘোষণার মাত্র ১০ ঘণ্টায় মিনিসোর শেয়ারের দাম কমেছে ৩৭ শতাংশ। আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মিনিসোর বিক্রিও কমেছে। তবে সেটা কত শতাংশ, এখনই বলা যাচ্ছে না।