নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আজ শনিবার রাজ্যাভিষেক হয়েছে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের। তাঁর অভিষেকে যোগ দিতে বিশ্বের প্রায় ১০০ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত হন। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক পর্যটকও পাড়ি জমান লন্ডনে।
কিন্তু ব্রিটেনের ইতিহাসের অন্যতম বড় ও আড়ম্বরপূর্ণ এই অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য দেশটির রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কী পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়েছে? এই অনুষ্ঠান যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য লাভজনক নাকি বোঝা হবে? এমন অনেক প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে অনেকের মনে।
সিএনবিসির খবরে বলা হয়েছে, যদিও লাখ লাখ লোক ঐতিহাসিক এ উপলক্ষ উদ্যাপন করেছেন, তবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল যুক্তরাজ্যের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে। দেশটির অনেক নাগরিকই জীবনযাত্রার সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে রাজকীয় নানা আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রকৃত খরচ এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি যুক্তরাজ্যের সরকার। কিন্তু ব্লুমবার্গসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই খরচ ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত হিসাব করা হয়েছে। বিকল্প মুদ্রায় হিসাব করলে তা হয় প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ (১২৬ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে)। বলা হয়েছে, অভিষেক অনুষ্ঠানের কারণে প্রত্যেক ব্রিটিশ নাগরিকের ঘাড়ে অতিরিক্ত খরচ চাপবে দেড় পাউন্ড করে।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্য সরকার বেশ জোর দিয়েই বলে আসছে, রাজ্যাভিষেকটি ব্রিটিশ অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে চলেছে। কারণ, এ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের পর্যটন, রেস্তোরাঁ ও পাবগুলোতে কয়েক কোটি ডলারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। যেমন বুকিং কোম্পানি ট্রাভেলপোর্টের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ বলেছে, অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে শেষ ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাজ্যগামী ফ্লাইটের সংখ্যা ১৪৯ শতাংশ বেড়েছে। আর হোটেল বুকিং প্ল্যাটফর্ম অ্যালোরা এআইয়ের হিসাবে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে হোটেলগুলোর মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস অনুমান করছে, শেষ পর্যন্ত অভিষেক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে যে পরিমাণ অর্থ যোগ হবে, খরচ হবে তার থেকে বেশি। রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটি ছিল। সে কারণে চলতি মে মাসে যুক্তরাজ্যের জিডিপির দশমিক ৭ শতাংশ পতন হতে পারে।
অভিষেক অনুষ্ঠানের বেশির ভাগ খরচই বহন করছে যুক্তরাজ্য সরকার। কিছু খরচ বাকিংহাম প্যালেসও দিয়েছে। তবে শেষ বিচারে অধিকাংশ খরচ ব্রিটিশ করদাতাদের থেকেই নেওয়া হচ্ছে।
ফলে এই আড়ম্বরপূর্ণ অভিষেক অনুষ্ঠান অনেক ব্রিটিশ নাগরিককে অসন্তুষ্ট করেছে। এক জরিপের বরাত দিয়ে সিএনবিসি জানিয়েছে, প্রায় ৫১ শতাংশ নাগরিক বলেছেন যে রাজ্যাভিষেকের জন্য সরকারের অর্থায়ন করা উচিত নয়।
সর্বশেষ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। এর পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৫৩ সালে তাঁর রাজ্যাভিষেক হয়। সিএনবিসির খবরে বলা হয়েছে, সে সময় ওই আয়োজনের জন্য প্রায় ১৫ লাখ পাউন্ড খরচ করা হয়েছিল, যা আজকের বাজারে আনুমানিক ৫ কোটি পাউন্ডের সমান।
তারও আগে ১৯৩৭ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জের রাজ্যাভিষেকের জন্য ব্যয় করা হয়েছিল সাড়ে ৪ লাখ পাউন্ড, যা আজকের হিসাবে প্রায় আড়াই কোটি পাউন্ডের সমান।