সখী ভালোবাসা কারে কয়?

ধরো, ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে ক্লাস শেষে ফিরছিলে ঘরে। মন এলোমেলো, বিক্ষিপ্ত। হঠাৎ রাস্তার অপর পাশের ফুটপাতের একটা দৃশ্য দেখে কৌতূহলী হয়ে গেলে। মাথায় সবুজ ওড়না দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল এক অষ্টাদশী। বৃদ্ধা এক ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইলো তার কাছে। স্নিগ্ধ একটা হাসি ফুটে উঠলো অষ্টাদশীর মুখে। কিন্তু অতলান্ত দুই চোখে বেদনার, সহানুভূতির ছাপ স্পষ্ট। পার্স থেকে ১০ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিলো বৃদ্ধার দিকে। তার সবুজ ওড়না, হাসি, তাকানো, অসহায় মানুষকে সাহায্য করা সবকিছু মুগ্ধ করলো তোমাকে। তুমি ভাবলে–হ্যাঁ, একেই তো আমি খুঁজছিলাম এতোদিন! সে-ই আমার জন্য একদম পারফেক্ট। তোমার এই অবস্থাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়–Love at first Sight বলে। প্রথম দেখায় প্রেম। কিন্তু এটাই কি ভালোবাসা?

রবি ঠাকুর বহু বছর আগে প্রশ্ন করেছিল ভালোবাসা কাকে বলে? প্রশ্নটা এখনো প্রাসঙ্গিক। চারদিক আজ ভালোবাসায় সয়লাব। ভালোবাসার বাম্পার ফলনে এমন অবস্থা যে রাস্তাঘাটে বিশেষ দিবসগুলোতে চোখ তুলে তাকানো যায় না। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো প্রেম না করলে, ভালোবাসার একটা মানুষ না থাকলে অন্যদের ক্ষ্যাত, ব্যাকডেইটেড মনে করা এই আমরা আসলে ভালোবাসার সংজ্ঞাটাই জানি না!

এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। সিনেমা, নাটক, সাহিত্য, মিডিয়ার ব্রেইনওয়াশিং আছে, নষ্ট সভ্যতার নষ্ট দর্শনের প্রভাব আছে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের লাভক্ষতির হিসেব আছে, সুশীল-প্রগতিশীল গোষ্ঠী, এককথায় সাংস্কৃতিক জমিদারদের ধোঁকাবাজি আছে, আছে ভাষার সূক্ষ্ম মারপ্যাঁচ। ঘটা করে ভালোবাসা দিবস পালন করলেও, প্রেমের জয়গান গাইলেও আদর্শিক অবস্থানের কারণে সাংস্কৃতিক জমিদাররা তোমাকে শেখাবে না ভালোবাসার সংজ্ঞা। তোমরা যে প্রেম করছো, জীবন দিয়ে দিচ্ছো, ক্যারিয়ার নষ্ট করছো, পরিবার, সমাজ ও জাতির বোঝা হচ্ছো–সরি টু সে, সেগুলো ভালোবাসা না। সেগুলো স্রেফ মোহ বা দৈহিক আকর্ষণ (lust-কামনা)। যদি তোমরা জানতে, যেই ছেলেগুলো প্রেমাতাল হয়ে জীবন নষ্ট করছে, যেই মেয়েগুলো ভালোবাসার প্রমাণ দেবার জন্য বরিশালের লঞ্চের কেবিনে উঠছে–তারা যদি জানতো, তাহলে এভাবে তারুণ্যের অপচয় হতো না, এভাবে বিষাদ সাগরে হাবুডুবু খেতো না পুরো একটা প্রজন্ম, ডুবতে থাকতো না পুরো একটা জাতি। পুরো একটা সভ্যতা!

ভালোবাসার সাথে যে দুইটি জিনিস সবচেয়ে বেশি গুলিয়ে ফেলা হয় তা হলো মোহ (infatuation) এবং কামনা (lust)। বাঁচতে হলে ভালোবাসা, মোহ এবং কামনা/দৈহিক আকর্ষণ–এই তিনটি বিষয় অত্যন্ত ভালোমতো বুঝতে হবে। তাহলে এসো দেখে নেওয়া যাক, এই বিষয়গুলোর মধ্যে পার্থক্যগুলো কী কী।

মোহ: ড. লরেন ফৌগল মারসি একজন মনোবিজ্ঞানী এবং সেক্স থেরাপিস্ট। তার মতে মোহ হলো–কাউকে ভালোমতো না জেনেই তার প্রতি তীব্র আকর্ষণ, মুগ্ধতার অনুভূতি। এই অনুভূতি খুবই তীব্র হয়। কিন্তু এর পুরোটাই শারীরিক আকর্ষণ এবং সেই ব্যক্তিকে নিয়ে নিজের করা কাল্পনিক ফ্যান্টাসির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে।

গ্রেইস সা, একজন লাইসেন্সড হেলথ কাউন্সেলর। তার মতে, কোনো একজন ব্যক্তির সাথে দেখা হবার পর খুব দ্রুতই মোহ তৈরি হয়ে যেতে পারে। প্রথমবারের মতো দেখা হয়েছে, কিন্তু মনে হতে পারে–যাক, অবশেষে আমি তাকে খুঁজে পেলাম। কারো শরীর, চুল, চোখ, হাসি, কোনো নির্দিষ্ট আচার-আচরণ, কথাবার্তার স্টাইল, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, চেহারা…যেকোনো কিছু দেখেই মানুষ একদম নিমিষেই, প্রথম দেখাতেই তার মোহে পড়ে যেতে পারে।

মোহের তীব্রতা বেশি হলেও এটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এবং রঙ্গমঞ্চে অন্য মানুষ চলে আসলে আগেরজনকে বাদ দিয়ে মোহের অনুভূতিগুলো তার দিকে চলে যায়। মোহের এই তীব্র অনুভূতির কারণে অনেকেই এটাকে ভালোবাসার সাথে গুলিয়ে ফেলে। মোহে হাবুডুবু খেয়ে ভাবে, আমি তাকে ভালোবাসি।

বিশেষজ্ঞদের মতে মোহের কিছু লক্ষণ –

১। তুমি সবসময় তার কথা ভাবো। তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ো।

২। তার সাথে বাস্তবে তেমন কোনো ইন্টার‍্যাকশন হয়নি। কথাবার্তাও তেমন হয়নি।

৩। তুমি মনে করো রূপেগুণে, চরিত্রে সে একদম পারফেক্ট একজন মানুষ।

৪। তুমি মনে করো সে তোমার জন্য একদম পারফেক্ট ম্যাচ, তোমার আদর্শ জীবনসাথী।

৫। তার প্রতি তীব্র শারীরিক আকর্ষণ বোধ করো। এই দৈহিক আকর্ষণের কারণে তুমি তার সম্পর্কে অন্য জিনিসগুলো (তার ব্যক্তিত্ব, চরিত্র, গুণ) জানার ব্যাপারে মনোযোগ দিতে পারো না। বা দাও না।

৬। তার পাবলিক জীবন সম্পর্কে টুকটাক কিছু জানলেও ব্যক্তিগত জীবনে সে কেমন, তা নিয়ে তোমার তেমন কোনো জানাশোনা নেই। তুমি যা জানো তার বেশিরভাগই তার পোশাক-আশাক, মানুষের সঙ্গে তার আচরণ ইত্যাদি দেখে ধারণা করা। আর যেগুলো জানো সেগুলোও বিশেষ কিছু না।

৭। দূর থেকে দেখে তুমি তাকে নিয়ে ফ্যান্টাসি করো, তার সাথে কোথায় ঘুরতে যাবে, কীভাবে সময় কাটাবে ইত্যাদি।

৮। যদি সে তোমার প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারে তাহলে তুমি একটু অসন্তুষ্ট হও।

৯। তার ভুল ত্রুটি কোনো কিছু কেউ দেখিয়ে দিলেও তুমি সেগুলোকে পাত্তা দাও না, কারণ সেগুলো তাকে নিয়ে তোমার ফ্যান্টাসির সাথে যায় না।

১০। তাকে মুগ্ধ করার জন্য তোমার চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না।

১১। তার প্রতি তুমি খুবই দ্রুত দুর্বল হয়ে যাবে। অনুভূতি হবে অত্যন্ত তীব্র। তুমি সবসময় তার সাথে সময় কাটাতে চাও। পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, কাজকর্মের ভয়ংকর ক্ষতি হলেও কুছ পরোয়া নেহি!

১২। সবকিছু অত্যন্ত দ্রুতগতিতে হবে। তুমি অস্থিরতায় ভুগবে। ঠিকমতো খেতে পারবে না, ঘুমাতে পারবে না। কোন কাজ করতে পারবে না। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তুমি রিলেশনশিপের চূড়ান্ত রূপ দেখতে চাইবে।

ভালোবাসা: ভালোবাসা হলো কারো প্রতি মায়ামমতা, অন্তরঙ্গতা আর দায়বদ্ধতার মিশেলে তৈরি হওয়া তীব্র শক্তিশালী এক অনুভূতি। ভালোবাসা আসতে কিছুটা সময় লাগে। তবে মোহের মতো এটা খুব দ্রুতই হয়ে যায় না।

হ্যাইলি নেইডিক, একজন সাইকোথেরাপিস্ট এবং রিলেশনশিপ এক্সপার্ট। তার মতে, ভালোবাসা হলো নিরাপত্তা, সম্মান, শ্রদ্ধা ও প্রশংসার এক অনুভূতি। একটা বন্ধনের মধ্যে দায়বদ্ধ এবং নিরাপদ থাকার অনুভূতি।

সিমৌন হামফ্রি ও সিনা সাইমন মনোবিজ্ঞানী এবং নিউইয়র্ক সিটি ভিত্তিক কাপল থেরাপিস্ট। ভালোবাসার সংজ্ঞা পাওয়া যাচ্ছে তাদের কাছে এভাবে–ভালোবাসা হলো মানুষের সেই মৌলিক চাহিদা যা তাকে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সাথে একটা বন্ধনের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে। ভালোবাসার বন্ধনে থাকে তীব্র মায়ামমতা, বিশ্বাস আর সেই মানুষকে তার সকল দুর্বলতা, অপূর্ণতাসহ গ্রহণ করে নেওয়া।

রিলেশনশিপ এক্সপার্ট অ্যালেক্স্যান্ড্রা স্টকওয়েল, সিমৌন হামফ্রি, সিনা সাইমন ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতে মোহ এবং ভালোবাসার মধ্যে কিছু পার্থক্য

মোহ/ভালোলাগা: সে আশেপাশে আসলে তুমি নার্ভাস হয়ে যাবে। মন চঞ্চল, অস্থির হয়ে যাবে। তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে, তোমার পোশাক-আশাক, চুল ইত্যাদির ব্যাপারে সচেতন হয়ে যাবে। তার সামনে সেজেগুজে যাবে সবসময়। তাকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করবে, মিথ্যার ভান ধরে হলেও। তার সামনে হিরো সাজবে। তার সাথে শুদ্ধ ভাষায়, স্টাইল করে, ঢং করে, ন্যাকামি করে মাঝে মাঝে দুই একটা ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলবে।

তোমার বাবা-মা পরিবার যদি তথাকথিত স্মার্ট না হয়, তাহলে তাদের নিয়ে তার সামনে হীনম্মন্যতায় ভুগবে। তাদেরকে সেই মানুষটার কাছ থেকে আড়াল করে রাখতে চাইবে। তোমার মধ্যে সবসময় একটা অস্থিরতা কাজ করবে।

তোমার ভুলত্রুটি, কমতি, দোষ, দুর্বলতা এগুলো গোপন করে তাঁর সামনে নিজের বাকী অংশ দেখাও–যে বাকী অংশ সবসময় সুন্দর পোশাক-আশাক পরে, স্মার্টভাবে চলাফেরা করে। সে তোমাকে ছেড়ে অন্য মানুষের কাছে চলে যেতে পারে এই ভয়ে থাকো তুমি। তাই তার জন্য তার মনমতো পারফেক্ট হতে চাও। এমনকি প্রতারণা করে, মিথ্যা বলে ভান ধরে হলেও।

ভালোবাসা: সেই মানুষটা পাশে থাকলে তুমি শান্তিবোধ করবে। মন শান্ত হবে। স্নিগ্ধ, শান্ত, নিরাপদ, আরামদায়ক, উষ্ণ এক অভিজ্ঞতা হবে তোমার। তোমার তুমিটাকে তার কাছ থেকে লুকানোর কোনো চেষ্টা করবে না। পারফেক্ট সাজার ভান করবে না। তোমার শক্তি, তোমার দুর্বলতা সবই সে জানে। তোমার দোষ লুকানোর চেষ্টা করবে না। মিথ্যা কথা বলে, ভান ধরে তার সামনে হিরো সাজতে যাবে না। তার সামনে হীনম্মন্যতায় ভুগবে না।

মোহ/ভালোলাগা: তার সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা লাগবে, ডেটিং-এ নিয়ে যাওয়া লাগবে, গিফট দেওয়া লাগবে… না হলে তাকে হারানোর ভয় করবে।

**ভালোবাসা: **কিছুটা সময় দিলেই হবে। কাজকর্ম, পড়াশোনা, সবকিছুর ক্ষতি করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, রাতের পর রাত সময় দেবার দরকার পড়বে না। তাকে দামি গিফট কিনে না দিলে বা ঘনঘন ঘুরতে না নিয়ে গেলেই সে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে, এমন ভয় থাকবে না।

মোহ/ভালোলাগা: মোহের ঘোরলাগা চোখে সাধারণত দুর্বলতা, কমতি চোখে পড়ে না। ওকে সম্পূর্ণ পারফেক্ট একজন মানুষ মনে হয় তোমার। যার কোনো ভুল নেই। ওকে মনে করো রূপকথার পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে আসা রাজকুমার। অথবা মনে হয় সকল মানবিক দোষত্রুটি মুক্ত প্রাচীন রহস্যঘেরা কোনো নগরী থেকে আসা ডানাকাটা পরী!

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ২০০৪ সালে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখলো–হ্যাঁ, যা বলা হয় তা-ই সত্য। প্রেম আসলে অন্ধই। প্রেমে পড়া প্রেমিক/প্রেমিকারা চোখে দেখতে পায় না।

কোনো কারণে যদি পর্দার ওপাশের এই জগৎটা তুমি জেনে ফেলো তাহলে তুমি তার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলবে। তাকে আর আগের মতো আকর্ষণীয় মনে হবে না। সম্পর্ক চালিয়ে নেবার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ পাবে না। সবার সামনে নাক খোঁটানো, জোরে জোরে নাকের সর্দি টানা, ঘুমের ঘোরে নাক ডাকা…এমন ছোট ছোট বদঅভ্যাসও একে অপরের প্রতি মোহ দূর করে দেয়। আকর্ষণ কমিয়ে দেয়।

ভালোবাসা: তার দুর্বলতা, কমতি, অপূর্ণতা দেখে তুমি তার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলবে না। বরং এসব গ্রহণ করে নিয়েই তার সাথে দিন কাটাবে। তাকে ভালোবাসবে।

মোহ/ভালোলাগা: সেই মানুষটার প্রতি নয়, বরং তোমার আকর্ষণের পুরোটাই হবে শরীর ও চেহারা কেন্দ্রিক। তার চেহারা, চুল, চোখ আর ঠোঁট, তার শরীর, তার পোশাক, তার কথা বলার স্টাইল, তার কণ্ঠস্বর… এসব থাকবে তোমার মনোযোগের কেন্দ্রে। যদি তার চুল পড়ে যায়, চেহারা খারাপ হয়ে যায়, যদি মুটিয়ে যায়, যদি ফিগার নষ্ট হয়ে যায়, যদি সুন্দর করে সেজেগুজে না থাকে, তাহলে তুমি তার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলবে। তুমি সবসময় তাকে সুন্দর সুন্দর পোশাকে সেজেগুজে থাকা অবস্থায় দেখো, কোনো কারণে তাকে সাধারণ পোশাকে, সাজগোজবিহীন অবস্থায় দেখলে আকর্ষণ কমে যাবে।

ভালোবাসা: ভালোবাসা শুধু শরীর কেন্দ্রিক না। ভালোবাসা সেই মানুষটার চেহারা বা পোশাক কেন্দ্রিকও না। তার চেহারা নষ্ট হয়ে গেলেও, তার মাথার চুল পড়ে গেলেও, সে মোটা ধুমসি হয়ে গেলেও, আগের মতো ‘হট’ না লাগলেও তুমি তাকে ভালোবাসবে। সুন্দর পোশাকে সাজগোজ করা অবস্থায় তুমি তাকে যেমন ভালোবাসবে, তেমনি কালিঝুলি মাখা নোংরা পোশাকে, গা বা মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসা অবস্থাতেও তুমি তাকে ভালোবাসবে। কারণ তুমি তার চেহারা বা শরীরটাকে নয় বরং সেই মানুষটাকে, তার আত্মাকে ভালোবেসেছো।

মোহ/ভালোলাগা: তার কোনো আচরণ বা কোনো ভুল চোখে পড়লেও সে কী মনে করবে, বা ব্রেকআপ করে ফেলবে কি না, এই ভেবে তুমি তার ভুল সংশোধনের চেষ্টা করো না। ধরো সে রিকশাওয়ালার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তোমার এটা ভালো লাগে না। কিন্তু তুমি ভয়ে বলতেও পারো না, কারণ কিছু বললে হয়তো সে তোমার সাথে সম্পর্কের ইতি ঘটাবে।

ভালোবাসা: তার ভুল ধরিয়ে দেবে। সে কী মনে করবে, এটা চিন্তা না করে তাকে সংশোধন করে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইবে। কারণ তুমি তাকে ভালোবাসো।

মোহ/ভালোলাগা: তুমি তার প্রতি তীব্র আকর্ষণবোধ করো। কারণ তুমি ভাবো সে পারফেক্ট। মাথার মধ্যে তুমি তার একটা পারফেক্ট ইমেজ বানিয়ে নিয়েছো। ঠিক তুমি যেমন চাও সে তেমনই। তোমার স্বপ্নের রাজকন্যা বা রাজকুমার। এটা বিশ্বাস করেই তুমি দিনের পর দিন পার করে দাও। সে আসলেই তেমন কিছু কি না, তা যাচাই করে দেখার প্রয়োজন বোধ করো না।

ভালোবাসা: তুমি জানো, তুমি বোঝো সে একজন মানুষ। তার পক্ষে পারফেক্ট হওয়া সম্ভব না। তার কমতি আছে। তুমি সেগুলো গ্রহণ করে নিয়েছো।

মোহ/ভালোলাগা: যতোই কাছাকাছি হবে, যতোই একে অপরকে বেশি করে জানবে, তোমাদের মধ্যকার আকর্ষণ ততোই কমতে থাকবে। প্রথমদিকে সে ছিল একটা রহস্যের মতো। কিন্তু আস্তে আস্তে রহস্যের উন্মোচন হয়ে যাওয়ায় সেই প্রথম দিককার মতো উত্তেজনা, রোমাঞ্চকর অনুভূতি আর থাকবে না।

ভালোবাসা: দিন যতো যেতে থাকবে, বন্ধন ততো মজবুত হবে।

**মোহ/ভালোলাগা: **সে তোমার উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সবসময় তোমার সঙ্গ পেতে চাইবে। তোমার কষ্ট বা ক্ষতি হচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখবে না। ধরো, তুমি পড়াশোনা বা কোনো কাজে ব্যস্ত ছিলে। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত হয়ে ঘরে ফিরেছো। প্রচুর বিশ্রাম দরকার। কিন্তু সারাদিন কেন তুমি তার খোঁজ নিলে না, এটা নিয়েই সে তোমাকে প্যারা দেবে। তোমার ক্লান্তি নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা থাকবে না। অথবা ধরো, পরীক্ষার আগের রাতে হুট করে তুচ্ছ কারণে সে তোমার সাথে ঝগড়া করবে। অভিমান করে থাকবে। তোমার যে পরীক্ষা আগামীকাল, এটা তার মাথাতে থাকবে না। হুটহাট করে গিফটের আবদার করবে বা দামি রেস্টুরেন্টের বিলের দায় তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে।

ভালোবাসা: সে তোমার উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। উল্টো অনুপ্রেরণা দেবে। সাহস যোগাবে।

সে সুখ পাচ্ছে কিনা এটার চাইতে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে সে তোমাকে সুখী করতে পারছে কিনা। তোমার সুবিধা-অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখবে। কোনো কথা বলা বা কোনো কাজ করার আগে বা পরে চিন্তা করবে এটা করলে তোমার কষ্ট হবে না তো, তোমার ক্ষতি হবে না তো? কোনো কিছু চাইবার আগে মাথায় রাখবে সেটা পূরণ করার সামর্থ্য তোমার আসলেই আছে কিনা।

খুব সুন্দর একটা উক্তি আছে–তোমার যখন কোনো ফুল ভালো লাগবে, তুমি তাকে ছিঁড়ে নেবে। যখন তুমি ফুলকে ভালোবাসবে, তখন গাছটাতে প্রতিদিন পানি দেবে।

মোহ/ভালোলাগা: অনেকটাই দুধের মাছির মতো। সুসময়ে থাকে। বিপদ-আপদে পাশে থাকে না। তোমার চাইতে বেশি সুন্দরী, বেশি হট, বেশি টাকাপয়সাওয়ালা, বেশি হ্যান্ডসাম কাউকে দেখলে আল্লাহ হাফেয বলতে সময় নেবে না।

ভালোবাসা: শত ঝড়ঝাপ্টা, বিপদ-আপদেও পাশে থাকে, আগলে রাখে, ভেঙে পড়লে অনুপ্রেরণা যোগায়, সাহস যোগায়। বেশি সুন্দরী বা বেশি টাকাপয়সাওয়ালা, হ্যান্ডসাম কাউকে দেখলেই ছেড়ে চলে যায় না।

একেই বলে ভালোবাসা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *