আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে যে পরিকল্পনায় সফল আফিফরা

ম্যাচসেরার পুরস্কারটা দুজনকে ভাগ করেও দেওয়া যেত।

দিতে যে হবেই এমন না, তবে পারফরম্যান্স দেখে কথাটা বলা। সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানের জুটিতে মেহেদী হাসান মিরাজের অবদান ৮১*, আফিফ হোসেনের ৮৬*। কেউ কারও চেয়ে কম নন। মিরাজ এগিয়ে গেছেন বল হাতে—১০–৩–২৮–০-এর বোলিং ফিগারে। আফিফও তো স্পিনে হাত ঘোরান। অধিনায়ক তামিম ইকবালকে এখন তিনি অনুযোগ করে বলতেই পারেন, তাঁকেও একটু বল করার সুযোগ দেওয়া যেত। তবে আফিফ একেবারে খালি হাতে ফেরেননি। ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’–এর পুরস্কারটা যে তাঁর হাতেই উঠেছে।একটা ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় ও সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের মধ্যে কি মোটাদাগে বড় কোনো পার্থক্য ধরা যায়? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু আজ অন্তত ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল’ পুরস্কারটি সার্থক—ম্যাচের আরেক নায়ককেও যে খালি হাতে ফিরতে হয়নি। তবে আফিফ বল না করলেও একটি জায়গায় সেটুকু পুষিয়ে দিয়েছেন। মিরাজের সঙ্গে হিরণ্ময় জুটি গড়ার পথে দুজন মিলে কীভাবে ব্যাট করবেন, কাকে দেখে খেলবেন, কার কাছ থেকে রান আদায় করবেন—এসব পরিকল্পনার বেশির ভাগই এসেছে আফিফের মাথা থেকে। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে মিরাজ নিজেই সে কথা বলেছেন।আর আফিফ সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন, আফগানিস্তানের স্পিনারদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনাও ছিল তাঁদের। রশিদ খান, মুজিব উর রেহমান ও মোহাম্মদ নবী—এই তিন স্পিনারকে দুই তরুণ মিলে যেমন কোনো উইকেট দেননি, তেমনি চড়েও বসতে দেননি। পরিকল্পনাটা জানালেন আফিফ, ‘ওদের যে ৩ জন স্পিনার, তাদের বিপক্ষে পরিকল্পনা ছিল স্বাভাবিক খেলা। এদের ওভার শেষ হলে আরও ৫ ওভার বাকি থাকত। ওখানে একটা পরিকল্পনা, শেষ দিকে যখন খেলা অনেক দূর চলে গেছে, শেষ ৫ ওভারে যদি ৩০-৪০ বা ৫০ রানও লাগে আমরা চেষ্টা করব। আমরা যেন শেষ করতে পারি। ওদের স্পিনারদের উইকেট না দিয়ে ব্যাটিং করার পরিকল্পনা ছিল।’

শুধু সফল বললে কম হয়, আফগানিস্তানের স্পিনারদের মানসিকভাবে পিছিয়ে দেওয়ার মতো সফলতা পেয়েছেন দুজন। ১২তম ওভারের তৃতীয় বল থেকে সপ্তম উইকেটে জুটি বাঁধেন দুজন। মুজিব এর আগেই ৫ ওভারে ১৫ রান দিয়ে সাকিব আল হাসানকে তুলে নেন। মাহমুদউল্লাহকে আউট করা রশিদের সেই ওভারে দুজনে জুটি বাঁধার পর শেষ ৪ বলে এসেছে (লেগ বাইয়ে বাউন্ডারিসহ) ৬ রান। এখান থেকে হিসাব কষা যায়।

মুজিবের কাছ থেকে বাকি ৫ ওভারে ১৭ রান আদায় করেন আফিফ–মিরাজ। রশিদের ৯.৪ ওভার থেকে ৩০ এবং নবীর ১০ ওভার থেকে ৩২। বোঝাই যাচ্ছে, তিন স্পিনারকে দেখেশুনে খেলেছেন দুই তরুণ। তাতে আফিফের হিসাবটা মিলে যায়। ৪৫তম ওভার শেষে দেখা গেল, জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে ২৯ রান চাই বাংলাদেশের। হাতে সেই ৪ উইকেটই।

এই শেষ লড়াইয়ে রশিদ খান শুধু নিজের কোটার শেষ ওভারটা (৪৭তম) করতে পেরেছেন। সে ওভারে রশিদ ১ রান দিলেও তার আগের ওভারে (৪৬তম) ফজলহক ফারুকির কাছ থেকে ১৩ এবং ৪৮তম ওভারে একই বোলারের কাছ থেকে ১১ রান আদায় করে ম্যাচটা সহজ করে ফেলেন দুজন। ভুললে চলবে না, এই ফারুকিই বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে ৫ ওভারের মধ্যে একাই ৪ উইকেট নিয়ে জয়টা প্রায় অসম্ভব বানিয়ে ফেলেছিলেন।

আফিফ (৯৩*) ও মিরাজ (৮১*) সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন কুশলী ব্যাটিংয়ে। টুপি খোলা অভিনন্দনটা তাঁদের প্রাপ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *