
নগরায়ন (বা শহরায়ন) বলতে গ্রামাঞ্চল থেকে শহুরে অঞ্চলে জনসংখ্যার স্থানান্তর, গ্রামের তুলনায় নগর অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের অনুপাত ক্রমশ বৃদ্ধি এবং কোনো সমাজ যেভাবে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় তা বোঝায়। এটি মূলত এমনন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শহর এবং নগরগুলো গঠিত হয় এবং আরও বেশি লোক বসবাস এবং কাজ শুরু করায় তা বৃহত্তর হয়ে ওঠে। জাতিসংঘ প্রস্তাব করেছিল যে ২০০৮ সালের শেষদিকে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক লোক শহুরে এলাকায় বাস করবে। ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রায় ৬৪% এবং উন্নত বিশ্বের ৮৬ শতাংশই নগরায়িত হয়ে নগরাঞ্চলে পরিণত হবে।মানুষ জীবিকার টানে প্রতিনিয়ত শহরের দিকে ছুটছে।

বিশেষ করে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যখন কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে তখন জীবিকা নির্বাহের জন্য গ্রামের মানুষ শহরের দিকে ছুটছে। নগরায়নের ফলে শহরের উপর প্রতিনিয়ত চাপ বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘ বলছে নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন একত্রিত হয়ে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শহুরে জীবনযাত্রায়। যদি রাজধানী ঢাকার ভবিষ্যৎ ছবি আঁকি, তাহলে ভয়ে আঁতকে ওঠা ছাড়া উপায় নেই। ঢাকার বাইরের ছবি কী? সাম্প্রতিক সময়ে মফস্বল অঞ্চলের তিনটি শহর দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুর শহর, যা ব্রিটিশ আমলে একটি প্রশাসনিক শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে এর নাগরিক বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পায়। ১৮৬৯ সালে এটিকে মিউনিসিপ্যালিটি করা হয় এবং এটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মফস্বল অঞ্চলের একটি পরিচ্ছন্ন শহর, যেখানে সরকারি কর্মকাণ্ড ছাড়াও শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যা কিনা নগরায়ণের আসল রূপ।
২০১১তে জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭২৭, যা বর্তমানে দুই লাখে উপনীত হয়েছে। শহরটি ছড়িয়ে পড়েছে চতুর্দিকে, এমনকি এর অভ্যন্তর ভাগে, যেখানে আগে খোলা প্রান্তর ছিল, খাল ছিল, নদী ছিল তা ভরাট করে বসতি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে পৌরসভাটি ২৪ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। শহরের দোকানপাট, অটোরিকশা, রাস্তার পাশ ধরে বাজার, দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, স্কুল–কলেজ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবই হয়েছে বা হচ্ছে কোনো চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা ছাড়াই।
আমার জানামতে, অতীতে বিভিন্ন পৌরসভার ভবিষ্যৎ বিস্তৃতি এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় কিছু শহর-পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই পরিকল্পনার কী হলো? সারা বাংলাদেশে তথাকথিত নগরায়ণের বিস্তৃতি ঘটছে। হাজার হাজার মানুষ ছুটছে এই শহরগুলোর দিকে নানা প্রয়োজনে। এই নগরায়ণের বহু ইতিবাচক দিক আছে। প্রশ্ন হলো এই নগরায়ণের বিষয়টিকে আমরা কীভাবে পরিচালনা করছি? বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয়, এগুলো লাগামহীনভাবে চলছে। এ রকম চলতে থাকলে ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে।