বাবরের ‘ব্রাফেট’ ইনিংস লড়াইয়ে রাখল পাকিস্তানকে

২২১ বল। ৯৭ রান। ১২ চার।

১৩৯ বল। ৫৪ রান। ৭ চার।

পরপর দুই দিনে দুই অধিনায়কের ধৈর্যের প্রদর্শনী রাখা দুই ইনিংস দেখল কিংস্টন টেস্ট। আগের দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেট ৯৭ রানের ইনিংসে টেস্টের মানসিকতা কেমন হয়, সেটা দেখিয়েছেন। স্যাবাইনা পার্কে তৃতীয় দিনে কাল যেন ব্রাফেটের ইনিংসই অনুকরণ করে দেখালেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম।

দিন শেষ করেছেন ৫৪ রানে অপরাজিত থেকে, এর মধ্যেই চার ঘণ্টা ক্রিজে থেকে বাবর খেলে ফেলেছেন ১৩৯ বল। বাবরের ইনিংস বলতে সাধারণত যেমন স্ট্রোকের ফুলঝুরি বোঝায়, সেটি তেমন ছিলই না!

বিজ্ঞাপন

আশরাফের ইনিংসও বাবরের মতোই, বরং বাবরের চেয়েও বেশি ধীর গতির। আশরাফ খেলেছেন ৭৯ বল! ষষ্ঠ উইকেটে এ পর্যন্ত ৩৯ রান যোগ করেছেন বাবর-আশরাফ।

আশরাফ যে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন, সে জন্য অবশ্য নিজেদেরই দুষবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্মেইন ব্ল্যাকউড। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ক্রিজে আসার কিছুক্ষণ পরই কাইল মায়ার্সের মিডিয়াম-পেসে তৃতীয় স্লিপে সহজ একটা ক্যাচ হাতছাড়া করেন ব্ল্যাকউড। অথচ আশরাফ সে সময় আউট হয়ে গেল ভীষণ বিপদেই পড়ে যেত পাকিস্তান।

বিকেলে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকায় শেষ সেশনটা কাল একটু লম্বা হয়েছে। সে সময়ে ১২১ রানে পাকিস্তানের পঞ্চম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ক্রিজে আসেন প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রান করা আশরাফ।

বাবরের আগে আবিদ আলী পাকিস্তানের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন ছবি: এএফপি

তার একটু আগেই মোহাম্মদ রিজওয়ান (৩০ রান) আউট হয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান পড়ে গিয়েছিল বড় শঙ্কায়।

একে তো বৃষ্টি হয়েছে একটু আগে, তার মধ্যে পঞ্চম উইকেটে বাবরের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়া রিজওয়ান ফেরার পর মনে হয়েছিল, শেষ বিকেলের আলো-আঁধারিতে এই বুঝি পাকিস্তানের ইনিংসে মড়ক লেগে গেল! আশরাফের ক্যাচটা ব্ল্যাকউড ধরে ফেললে শঙ্কাটা আরও জেঁকে বসত, এটা নিশ্চিত

রিজওয়ানের সঙ্গে বাবরের জুটির আগেই যে পাকিস্তানের ইনিংসে ধাক্কা লেগেছিল। পাকিস্তানের নড়বড়ে টপ অর্ডারে আরেকবার সহজেই আঘাত হেনেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনিং বোলাররা। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান প্রথম ৪ উইকেট হারিয়েছিল ৬৮ রানে, দ্বিতীয় ইনিংসে কাল ৪ উইকেট গেল ৬৫ রানে। সেখান থেকে প্রথমে রিজওয়ান, পরে আশরাফের সঙ্গে মিলে বাবর লড়াইয়ে রাখলেন পাকিস্তানকে।

দিনের শুরুটা অবশ্য বল হাতে দারুণই হয়েছিল পাকিস্তানের। ৮ উইকেটে ২৫১ রান নিয়ে শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকি দুই উইকেট ২ রানের মধ্যেই তুলে নেন পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার শাহীন শাহ আফ্রিদি। দিনের প্রথম ওভারে জোমেল ওয়ারিকানকে তুলে নেওয়ার পর দিনের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে শাহীন ফেরান জশুয়া ডা সিলভাকে।

৩৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা পাকিস্তান শুরুতেই ধাক্কা খায়। তৃতীয় ওভারেই পাকিস্তান ওপেনার ইমরান বাটকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন কেমার রোচ, পাকিস্তানের রান তখন ১!

দ্বিতীয় উইকেটে দুই আলী—আবিদ ও আজহার মিলে ৫৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। কিন্তু নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসে আবার ধাক্কা রোচের। আজহার আলীর (২৩ রান) স্টাম্প নাড়িয়ে দেয় বারবাডিয়ান পেসারের অফ কাটার।

আজহারের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছিল, বল হয়তো তাঁর ধারণার চেয়েও নিচু হয়ে এসেছে। অবশ্য এর আগেই আজহারকে ফেরাতে পারতেন রোচ, তাঁর বলে দ্বিতীয় স্লিপে আজহারের ক্যাচ ধরতে পারেননি জেসন হোল্ডার।

হোল্ডার সে প্রায়শ্চিত্ত কিছুক্ষণ পরই করেছেন জেডেন সিলসকে ইনিংসে তাঁর প্রথম উইকেট উপহার দিয়ে। সিলসের বলে দ্বিতীয় স্লিপেই আবিদ আলীর লাফিয়ে ওঠা ক্যাচ ধরে ফেলেন হোল্ডার, আবিদের রান তখন ৩৪।

৫৬ রানে ১ উইকেট থেকে হঠাৎই তখন পাকিস্তান ৬৫/৩ হয়ে যায়। তিন বল পর ৬৫/৪! মধ্যাহ্নবিরতির আগে-পরে ৯ বলের মধ্যে পাকিস্তানের তিন উইকেট নেই! সিলসের বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফাওয়াদ আলম, রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি।

সেখান থেকেই শুরু বাবরের লড়াই। আজ চতুর্থ দিনে আশরাফ এবং এরপর লোয়ার-অর্ডারকে নিয়ে পাকিস্তানের লিডটাকে কত রানে এগিয়ে নিতে পারেন বাবর, তা-ই দেখার।

অন্তত ২২০-২৫০ রানের বেশি তো নিতেই চাইবেন পাকিস্তান অধিনায়ক। এই উইকেটে কত রানের লক্ষ্য তাড়া করা সহজ হবে, প্রশ্নে উইন্ডিজ পেসার সিলস দিন শেষে বলেছিলেন, ‘লক্ষ্যটা ১৭০ থেকে ২০০ রানের মধ্যে হলেই আমাদের জয়ের ভালো সম্ভাবনা থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *