মহাকাশে মানুষের চোখ

রাতের আকাশে তারাদের আমরা কখনো মিটমিট করে জ্বলতে দেখি। কখনো উজ্জ্বলতা বাড়ছে, কখনো কমছে। সেটাকেই মনে হয় নিবুনিবু এক আলোকবিন্দু। এর কারণ কিন্তু তারার কোনো বৈশিষ্ট্য নয়। হাজার কোটি মাইল পেরিয়ে তারা থেকে আলো পৃথিবীতে এসে আমাদের চোখে ধরা দেয়। সমস্যা বাধে একেবারে শেষ কয়েক মাইলে, মানে আমাদের বায়ুমণ্ডল পার হতে। বায়ুমণ্ডলে আলো বিচ্ছুরিত হয়, আবার কোথাও ঠান্ডা, কোথাও গরম বাতাসে আলো প্রতিসরিত হয়ে একদম অন্য পথে চলে যায়। এসবের চেয়েও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় আলোক তরঙ্গের বিশাল একটা অংশ বায়ুমণ্ডলে শোষিত হয়ে যাওয়াটা। ফলে জ্বলজ্বলে তারা আমাদের কবিত্বকে খানিকটা বাড়িয়ে দিলেও সমস্যায় পড়েন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কোটি কোটি আলোকবর্ষ পেরিয়ে আসা একটা তথ্য শেষ মুহূর্তে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাঁদের বেশ দুঃখই করতে হতো। পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থিত বিশালকায় টেলিস্কোপগুলোতে মহাকাশের তথ্য যতটুকু পাওয়া সম্ভব হতো, বায়ুমণ্ডল বাগড়া না দিলে ঠিক ততটুকু আর পাওয়া যেত না। বিংশ শতাব্দীর অর্ধেকটা পর্যন্ত এই ব্যাপারটা চলছিল।

১৯২৩ সালে হারমান ওবার্থ, রবার্ট এইচ গডার্ড ও কনস্ট্যানটিন সিওকভস্কি একটা ধারণা দেন, কেমন করে রকেটে চড়িয়ে একটা টেলিস্কোপকে পৃথিবীর উপগ্রহের মতো একটা কক্ষপথে স্থাপন করা যেতে পারে। তারপর সেখান থেকে পাওয়া যেতে পারে বায়ুমণ্ডলের বাধাবিহীন উন্নত রেজল্যুশনের মহাজাগতিক তথ্য। সেই ধারণা কাজে লাগিয়ে অনেক সংস্থাই কক্ষপথে নানা সময়ে টেলিস্কোপ স্থাপন করেছে। কিন্তু যান্ত্রিক উত্কর্ষ আর সক্ষমতার বিচারে সবগুলোই পিছিয়ে পড়েছে নাসা-ইসা এবং আরও কিছু সংস্থার যৌথভাবে নির্মিত চার গ্রেট অবজারভেটরির কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *