ক্রীড়া প্রতিবেদক : অবশেষে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জেগেছেন। খেলোয়াড়দের ব্যক্তি পর্যায়ে সাহায্য-সহযোগিতার পর সরকারের তরফ থেকে মাত্র এক কোটি টাকা অর্থ সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন জাহিদ আহসান রাসেল। এক হাজার অসহায় ক্রীড়াবিদকে এ সাহায্য দেবে তাঁরা।
করোনার থাবায় ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থাও টালমাটাল। দুই বেলা খাবার জোটাতে অনেক খেলোয়াড়ের নাভিশ্বাস উঠছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এত দিন তাঁদের সহযোগিতা করছিল বিছিন্নভাবে। এই চরম দুর্যোগে বিপদগ্রস্ত খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। এ উপলক্ষে গতকাল তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করেন, তাতে ২৭টি ফেডারেশনের এক হাজার অসহায় ক্রীড়াবিদকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, ‘পুরো বিশ্ব আজ স্থবির ও আতঙ্কিত। একসঙ্গে এত মানুষ ঘরবন্দি হওয়ার মতো দুর্যোগ বিশ্ববাসী আগে দেখেছে কি না, আমার জানা নেই। এ দুর্যোগে সব মানুষের মতো ক্রীড়াঙ্গনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে যখন পুরোদমে খেলাধুলা চলছিল, তখন ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু খেলা চলছিল, যেগুলো খেলোয়াড়দের বার্ষিক আয়ের উৎসও। তাই খেলা বন্ধ হওয়ায় খেলোয়াড়রা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য গত ২৮ এপ্রিল আমরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে একবার সভায় বসেছিলাম। আজ দ্বিতীয় সভায় বসে অর্থ সাহায্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
প্রাথমিকভাবে তারা ২৭টি খেলার এক হাজার অসহায় ক্রীড়াবিদকে সাহায্য দেবে ১০ হাজার টাকা করে। অর্থাৎ প্রত্যেক খেলার মাত্র ৩৭ জন ক্রীড়াবিদ পাবেন সরকারের এ অর্থ সাহায্য! অথচ এক ফুটবল মাঠ থেকেই পাওয়া যাবে অন্তত ২০০-৩০০ বিপদগ্রস্ত ক্রীড়াবিদ। খেলা চললে তাঁরা ক্লাব কিংবা সংগঠনের তরফ থেকে তাঁদের আয় হয়। তা ছাড়া ক্রিকেট বাদে দেশের অন্য খেলাগুলো বাঁচিয়ে রেখেছে দরিদ্র পরিবারের ছেলেপুলেরা। এর মধ্যে অ্যাথলেটদের একাংশকে ছাঁটাই করেছে বিজেএমসি, খুব দীনহীনভাবে জীবন কাটছে তাদের। তাদের চাকরির বিষয়টি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে কোনো কিনারা করতে পারেনি অ্যাথলেটিক ফেডারেশন। অন্যান্য খেলার অ্যাথলেটদের অবস্থাও ভালো নয়। খেলা বন্ধ, তাই জীবন ও জীবিকা পড়েছে হুমকির মুখে। সুতরাং ক্রীড়াঙ্গনেও চরম হাহাকার। সেখানে এক কোটি টাকার অর্থ সহায়তা আসলে খুব বেশি কিছু নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রীড়া সংগঠক মনে করেন, ‘এক কোটি টাকা দিয়ে ক্রীড়াঙ্গনকে রক্ষা করা যাবে না। কারণ বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই গরিব, তারা জীবিকার সন্ধানেই খেলাধুলায় আসে। খুব সামান্য পেয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকে। এ দুর্দিনে তাদের প্রত্যেকের পাশে দাঁড়াতে হবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে, তাদের আশ্বস্ত করতে হবে। নইলে খেলার মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।’
তবে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেছেন কয়েক স্তরে সাহায্য-সহযোগিতার কথা, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং কয়েকজনকে বলে দেবেন, যাঁরা খেলোয়াড়দের মানবিক সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। যৌথভাবে আমরা অসহায় ক্রীড়াবিদদের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টায় আছি। মানবিক সহায়তাগুলো কয়েক স্তরে দেওয়ার চিন্তা করছি। প্রথম ধাপে বিভিন্ন ফেডারেশনের ১০ হাজার জনকে সহায়তা দেব। আসলে যাদের না দিলেই নয়, তাদের নাম আনা হবে ফেডারেশনগুলো থেকে।’ তাদের প্রাথমিক চিন্তা ২৭টি খেলা নিয়ে। অথচ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধিভুক্ত খেলা আছে ৪৫টি, সবটির আলাদা ফেডারেশন কিংবা অ্যাসোসিয়েশন আছে। অন্য খেলার ক্রীড়াবিদদের কী হবে বা তাদের জন্য কী বরাদ্দ হবে, তার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এ সভায়।
আলোচনা হয়েছে অ্যাথলেটদের সম্মানী ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে। জাহিদ আহসান রাসেল সভা শেষে বলেছেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা আছে। তাহলে ক্রীড়াঙ্গনে কেন থাকবে না? আমরাও উদ্যোগ নিয়েছিলাম সম্মানী ভাতা দেওয়ার। অনলাইনে আবেদনও চেয়েছিলাম; কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে প্রক্রিয়া চূড়ান্তকরণের কাছাকাছি এসেও স্থগিত করেছি। আশা করি, ঈদের পর আমরা এ সহায়তা দিতে পারব। করোনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে এককালীন ২৪ হাজার টাকা করা হবে।’
Collected from Kaler Kantha