ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ২০২১ সালে চালু হয় ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার। এক বছর পূর্ণ করল দেশের পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতালটি। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা, পরিচালনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বললেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ শামীম
ল্যাবএইডে ক্যান্সার হাসপাতাল চালুর উদ্দেশ্য কী?
ক্যান্সার চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা এখন দেশেই রয়েছে। তবে শুধু ক্যান্সার চিকিৎসার সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল দেশে তেমন নেই।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমার বাবা ডা. এ এম শামীম ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা এখন রাজধানীর গ্রিন রোডে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার নামে সেবা দিয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি আমরা। ১৫০ শয্যার পাশাপাশি রয়েছে বিশেষ কেমো বেডের ব্যবস্থা। ক্যান্সারের সঠিক পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় (ডায়াগনসিস) নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি দক্ষ ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞ, হিস্টোপ্যাথলজিস্ট, ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজিস্টের সমন্বয় করা হয়েছে। আর এসবই রয়েছে একই ছাদের নিচে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য হাসপাতালের কাছেই আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কী ধরনের প্রযুক্তি রয়েছে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে?
ক্যান্সার চিকিৎসায় আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এটি হবে সব ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় দেশসেরা ক্যান্সার চিকিৎসক, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধার এক সমন্বিত প্রতিষ্ঠান। সুসজ্জিত প্যাথলজি ল্যাব, ডে কেয়ার সেন্টার, প্যালিয়েটিভ কেয়ার, সাইকোথেরাপি সেন্টার, সার্বক্ষণিক ফার্মেসিসেবা সবই রয়েছে এখানে। এ ছাড়া এই ক্যান্সার হাসপাতালে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেডথেরাপি, হরমোনথেরাপি, জিনথেরাপি, রেডিওথেরাপি টেকনিক, বিশেষ করে থ্রিডি সিআরটি (থ্রিডি কনফরমাল রেডিয়েশনথেরাপি), আইএমআরটি (ইনটেনসিটি মডিউলেটেড রেডিওথেরাপি), আইজিআরটি (ইমেজ-গাইডেড রেডিয়েশনথেরাপি), র্যাপিড আর্ক, এসআরএস (স্টেরিওট্যাকটিক রেডিও সার্জারি), এসবিআরটি (স্টেরিওট্যাকটিক বডি রেডিওথেরাপি), ব্র্যাকিথেরাপি, ইলেকট্রন বিমথেরাপি, বিএমটি (বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন), কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন, লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন, রোবটিক সার্জারি, হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড প্যানক্রিয়েটিক সার্জারি, পিআইসিইউ (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট), এনআইসিইউ (নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট)।
দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের বড় একটি অংশ বিদেশে চিকিৎসাসেবা নেয়, এ নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?
দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একাংশ বিদেশে চিকিৎসা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। অনেকে চিকিৎসা নিতে চলেও যান। এর পরের ধাপগুলো সবার জানা। যেহেতু ক্যান্সার চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ, তাই যত সময় যায়, চিকিৎসার ব্যয় তত বাড়তে থাকে। এ ছাড়া দেশের বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির শিকার হওয়ার কথাও শোনা যায়। এভাবে অনেকে নিঃস্ব হয়ে রোগী নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তাঁদের উদ্দেশে আমার একটাই অনুরোধ, রোগীকে নিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার আগে, দেশের বিশ্বমানের চিকিৎসা ব্যবস্থাসম্পন্ন এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আমাদের হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ বিদেশের তুলনায় অনেক কম।
করোনাকালে অনেকে হাসপাতালে আসতে অনীহা বোধ করেন?
ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) অন্যান্য রোগীর তুলনায় অধিক দুর্বল হয়ে থাকে। কভিড-১৯ মানব শরীরে ইমিউন সিস্টেমকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করে। এ কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ও পরিবারের সদস্যদের মনে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। অনেক সময় কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি নিতে আসা রোগী ও পরিবারের সদস্যরা রোগীর স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার সম্পর্কে জানতে চান। তাঁদের নিশ্চিত করে আমরা বলি, যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালা ও করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আমাদের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট টিম রোগীকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সাইকোলজি কাউন্সেলিং টিম রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়মিতভাবে মানসিক সমর্থন, সাহস ও শক্তি জোগাতে সাহায্য করে থাকে। কিভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া যায়, সে ব্যাপারেও পূর্ণ সহযোগিতা করা হয়।
ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ৩০ বছর ধরে আস্থা ও ভরসার প্রতীক ল্যাবএইড। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ক্যান্সার চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটাতে এই হাসপাতালের যাত্রা। আমরা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে মানসম্পন্ন ক্যান্সার চিকিৎসাসেবা দিতে চাই। ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানের জন্য আমরা সারা দেশে ৩০টি পেরিফেরাল সেন্টার (প্রান্তিক কেন্দ্র) করার লক্ষ্যে কাজ করছি।