বিশ্বের কয়েকটি বিস্ময়কর পর্বত

নেপালের মাউন্ট এভারেস্ট : এভারেস্ট পর্বত বা মাউন্ট এভারেস্ট বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এই শৃঙ্গটি হিমালয়ের মহালঙ্গুর হিমাল পর্বতমালায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার) হলেও পৃথিবীর কেন্দ্র হতে এই শৃঙ্গের দুরত্ব সর্বাধিক নয়। চীন ও নেপালের আন্তর্জাতিক সীমান্ত এভারেস্ট পর্বতের শীর্ষবিন্দু দিয়ে গেছে।

Mount Everest

  মাউন্ট এভারেস্ট পর্বত

ব্রিটিশ পর্বতারোহীরা সর্বপ্রথম এই পর্বতশৃঙ্গ আরোহণের চেষ্টা শুরু করেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের অভিযান এভারেস্ট আরোহণের ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় অভিযান: জর্জ ম্যালোরি ও অ্যান্ড্রিউ আরউইন শৃঙ্গের দিকে আরোহণের একটি অন্তিম প্রচেষ্টা করেন কিন্তু আর ফিরে আসতে ব্যর্থ হন, যার ফলে তাদের আরোহণই প্রথম সফল আরোহণ কি না সেই নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে নেপালের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব শৈলশিরা ধরে প্রথম এই শৃঙ্গজয় করেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে মে, চীনা পর্বতারোহী ওয়াং ফুঝোউ, গোনপো এবং চু ইয়িনহুয়া উত্তর শৈলশিরা ধরে প্রথম শৃঙ্গজয় করেন। ১৯৭৫ সালের ১৬ মে প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করার কৃতিত্ব লাভ করেন জাপানের জুনকো তাবেই। প্রথম দুইবার এভারেস্টে উঠতে সক্ষম হন শেরপা নাওয়াং গোম্বু। ১৯২২ সালের ২০ মে তিনি এই রেকর্ড অর্জন করেন। প্রথমে ১৯৬৩ সালে একটি আমেরিকান অভিযানে এবং ১৯৬৫ সালে একটি ইন্ডিয়ান অভিযানের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট করেন। প্রথম প্রতিবন্ধী হিসেবে ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টম হুইটেকার এভারেস্টের চূড়ায় উঠেন। একটি কৃত্রিম পা নিয়েও তিনি এভারেস্ট জয় করে বিশ্ববাসীকে চমকে দেন। নেপালের আপা শেরপা সবচেয়ে বেশিবার এভারেস্ট জয় করেছেন। ১৯৯০ সালের ১০ মে থেকে ২০১১ সালের ১১ মে পর্যন্ত তিনি মোট ২১ বার তিনি এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন। নন শেরপা হিসেবে এই রেকর্ড আমেরিকান পর্বতারোহী ও অভিযানের গাইড ডেভ হানের দখলে। ১৯৯৪ সালের ১৯ মে থেকে ২০১২ সালের ২৬ মে পর্যন্ত মোট ১৪ বার এভারেস্ট জয় করেছেন তিনি। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে অন্তত পাঁচজন বাংলাদেশী বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন।

জাপানের ফুজিয়ামা : এটি জাপানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, যার উচ্চতা ৩,৭৭৬.২৪ মিঃ (১২,৩৮৯ ফুট)। এটি একটি লাভাগঠিত সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এবং ১৭০৭-০৮ সালে এখানে সর্বশেষ অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটে। রাজধানী টোকিও থেকে ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে হনশু দ্বীপে মাউন্ট ফুজি অবস্থিত এবং একটি পরিষ্কার দিনে টোকিও থেকে এটিকে দেখা যায়। মাউন্ট ফুজিযামার জ্বালামুখটি আশ্চর্যরকমভাবে প্রতিসম যা বছরের বেশ কয়েক মাস বরফাচ্ছাদিত থাকে। এটি জাপানের একটি সুপরিচিত প্রতীক এবং জাপানের শিল্পকলা ও স্থিরচিত্রে প্রায়শই এটিকে দেখা যায়। পর্যটক ও পর্বতারোহীদের কাছে মাউন্ট ফুজি একটি জনপ্রিয় স্থান। এটি জাপানের তিনটি পবিত্র পর্বতের একটি; অপরদুটি হল: মাউন্ট তাতে এবং মাউন্ট হাকু। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এটি একটি বিশেষ স্থান এবং ২০০৩ সালের ২২শে জুন সংস্কৃতিক এলাকা হিসেবে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করা হয়।

1. Fujiama

                                                                                জানানের ফুজিয়ামা পর্বত

ইতালির ভিসুভিয়াস: এটি ইতালির নেপলস উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি আগ্নেয়গিরি। নেপলস থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে সমুদ্র উপকূলের খুব কাছে এর অবস্থান। এটি ইউরোপের মূল ভূখন্ডের মধ্যে অবস্থিত একমাত্র আগ্নেয়গিরি যাতে বিগত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে, যদিও বর্তমানে এটিতে কোন অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছেনা।

ভিসুভিয়াস পর্বত এর খিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দের অগ্ন্যুৎপাতের জন্য বেশি পরিচিত, যার ফলে রোমান শহর পম্পেই, হেরকুলেনিয়াম, অপ্লোন্তিস এবং স্তাবিএসহ পার্শ্ববর্তী কিছু বসতি লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। বিস্ফোরণের ফলে আগ্নেয় শিলা, ভস্ম এবং আগ্নেয় গ্যাসের মেঘ ৩৩ কিলোমিটার (২১ মাইল) উচ্চতায় ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অগ্নিকাণ্ডে এক হাজারেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিলেন, যদিও সঠিকভাবে জানা যায়নি কতজনের মৃৃৃত্যু হয়েছিল। এ শহরগুলো পরবর্তীকালে আর পুনঃর্নিমাণ করা হয়নি। যদিও শহরগুলোর বেঁচে যাওয়া অধিবাসীরা এবং সম্ভবতঃ লুটেরারা ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রচুর জিনিসপত্র সংগ্রহ করেছিল। কালক্রমে শহরগুলোর অবস্থান সবাই ভুলে গিয়েছিল; পরবর্তীকালে ১৮শ শতকে ঘটনাক্রমে শহরগুলো আবার খুঁজে পাওয়া যায় । এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সারনো নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল এবং সমুদ্রতটও আগের থেকে উঁচু হয়ে গিয়েছিল। তাই বর্তমানে পম্পেই শহরের অবস্থান না নদীর তীরবর্তী না সমুদ্রোপকূল সংলগ্ন। ভিসুভিয়াসও সময়ের সাথে সাথে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে – এর ঢালের সবুজ জঙ্গল আর নেই এবং অগ্ন্যুৎপাতের ধাক্কায় এর চূড়া অনেকটাই বদলে গেছে।

Vesuvius                                                                                   ইতালির ভিসুভিয়াস পর্বত

ভিসুভিয়াসের আশেপাশের অঞ্চলটি ১৯৯৫ সালের ৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছিল। ভেসুভিয়াসের শীর্ষ শিখরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এবং আগ্নেয়গিরির চারপাশে ছোট্ট একটি পথ রয়েছে যা পার্ক কর্তৃপক্ষ সাপ্তাহিক ছুটিতে রক্ষণাবেক্ষণ করে। শিখরের ২০০ মিটার (৬৬০ ফুট) এর মধ্যে রাস্তা দিয়ে সংযোগ রয়েছে (উল্লম্বভাবে পরিমাপ করা হয়), তবে এর পরে পথ কেবল পাদদেশে। রাস্তা থেকে আগ্নেয়গিরির মুখ পর্যন্ত আগ্নেয়গিরির চারপাশে একটি সর্পিল রাস্তা রয়েছে।

আফ্রিকার কিলিমানজারো: কিলিমানজারো আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত। এটি উত্তর-পূর্ব তানজানিয়াতে কেনিয়ার সাথে সীমান্তে অবস্থিত। কিলিমানজারো একটি মৃত আগ্নেয়গিরি। এর দুইটি শৃঙ্গ ১১ কিমি দূরত্বে অবস্থিত এবং একটি খাড়া ঢালের মাধ্যমে যুক্ত। উচ্চতর শৃঙ্গটির নাম কিবো এবং এটি সমুদ্র সমতল থেকে ৫,৮৯৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।

Kilimanjaro

                                                                                 আফ্রিকার কিলিমানজারো পর্বত

মাওয়েসি নামের অপর শৃঙ্গটি ৫,১৪৯ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। যদিও কিলিমানজারো বিষুবরেখার মাত্র ৩ ডিগ্রী দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থিত, কিবোর জ্বালামুখ সর্বদাই বরফে আবৃত থাকে। মার্কিন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিখ্যাত গল্প “দ্য স্নোজ অফ কিলিমানজারো” (১৯৩৮) এই অঞ্চলের পটভূমিতে রচিত হয়েছে। কিলিমানজারোর খাড়া ঢালে বেশ কয়েকটি ভিন্ন প্রকৃতির উদ্ভিজ্জ অঞ্চল আছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *