কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাস এর সূত্রপাত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসাবে আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রচলনের অনেক আগেই। এই বিষয়ে প্রথম ধারণা পাওয়া গেছিল প্রায় কয়েকশত বছর[১] আগে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন যন্ত্রের আবিষ্কার, গাণিতিক মতবাদগুলির প্রয়োগ ইত্যাদির ফলে এটি বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসাবে প্রচলিত হয় এবং এর মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী এক বিরাট শিল্পের ভিত্তি তৈরী হয়
মধ্যযুগের ইসলাম দুনিয়াও বিজ্ঞানচর্চায় উন্নত ছিল। মধ্যযুগের বিশ্বখ্যাত আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক আবু রায়হান আল বিরুনি[৭] যান্ত্রিক গীয়ারযুক্ত জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত যন্ত্র – অ্যাস্ট্রোলেব নিয়ে গবেষণা করেন ও আরবীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জাবির ইবন আফলা[৮] টর্কেটাম নামক যন্ত্র তৈরী করেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞান লেখক সাইমন সিং-এর মতে মুসলিম গণিতজ্ঞরা ক্রিপ্টোগ্রাফি বা সাংকেতিক-লিপির মতো বিষয়েও এগিয়ে ছিলেন। উদাহরণ হিসাবে প্রখ্যাত আরব পণ্ডিত আল-কিন্দির[৯][১০] কথা বলা যায়। বাগদাদের বানু মুসা ভাতৃত্রয়,[১১] স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাদি নিয়ে কাজ করেন ও ইসমাইল আল-জাজারি অটোমাটা বা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রবিদ্যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে সাফল্য পান। আল-জাজারির বিখ্যাত কিছু আবিষ্কার যেমন হাতি-ঘড়ি, দুর্গ-ঘড়ি ইত্যাদির কার্যনীতি প্রোগ্রামযোগ্য অ্যানালগ কম্পিউটারের মতো ছিল ও আজও বিস্ময়ের উদ্রেক করে,
অ্যাবাকাস-কেই গণনা সম্পাদনের সর্বপ্রাচীন যন্ত্র মনে করা হয় যা আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ২৭০০-২৩০০ অব্দে সুমেরীয় বা মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় প্রথম ব্যবহার করা হয়। সুমেরীয় সভ্যতায় ব্যবহার করা অ্যাবাকাস-এর মধ্যে অনেকগুলি কলাম বা স্তম্ভ ক্রমান্বয়ে সাজানো থাকতো যার মাধ্যমে সুমেরীয়রা বিভিন্ন স্ংখ্যার মান প্রকাশ করতো।[৩]:১১ বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় গাণিতিক হিসাবের প্রয়োজনে অ্যাবাকাস-এর ব্যবহার প্রচলিত ছিল। এমনকি, পৃথিবীর কোন কোন জায়গায় আজও হিসাব-নিকাশের জন্য অ্যাবাকাস যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।[৪]
প্রথম ডিফারেন্সিয়াল গীয়ার-এর প্রয়োগ হয়েছিল দক্ষিণ-নির্দেশী রথ নামক একটি যানে আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ১১১০ সালে, প্রাচীন চীনদেশে। এই গীয়ার পরবর্তীকালে অ্যানালগ কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়েছিল। চীনদেশে গাণিতিক হিসাবের প্রয়োজনে অ্যাবাকাস-এর এক অপেক্ষাকৃত আধুনিক সংস্করণ তৈরী করা হয় খ্রীষ্টপূর্ব ২০০ অব্দ নাগাদ।