অবশেষে জামিন পেলেন জামিয়া মিলিয়ার ছাত্রী সাফুরা

অবশেষে জামিন পেলেন জামিয়া মিলিয়ার এম ফিল ছাত্রী গবেষক সাফুরা জারগর। আজ মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট তাঁকে ‘মানবিক কারণে’ জামিন দেন। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে দিল্লিতে বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সাফুরা। দিল্লি পুলিশ তাঁকে গত এপ্রিল মাসে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করে তিহার জেলে বন্দী রাখে। আটক করার সময় সাফুরা তিন মাস অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

সাফুরার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লি দাঙ্গায় তিনি সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ‘প্রধান ষড়যন্ত্রকারী’। ওই দাঙ্গায় ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ‘আনলফুল অ্যাক্টিভিটিস প্রিভেনশন অ্যাক্ট’ (ইউএপিএ) অনুযায়ী অভিযোগ আনা হয়, যাতে জামিন পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।

কাশ্মীর জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা দেবিন্দার সিংকে গত শুক্রবার দিল্লির একটি আদালত জামিন দেন। তাঁর সঙ্গে জামিন পান জঙ্গি সন্দেহে আটক ইরফান শাফি। এরপরই ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন ওঠে, জঙ্গিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য গ্রেপ্তার পুলিশ কর্মকর্তা জামিন পেতে পারেন অথচ এনআরসি–বিরোধী আন্দোলনের জন্য একজন ছাত্রী মাসের পর মাস জেলে আটক আছেন, যিনি কিনা আগামী কিছুদিনের মধ্যে মা হতে চলেছেন। নানাভাবে এটা প্রচার হতে থাকে।

akbor ali
akbor ali

বস্তুত, সাফুরার জামিনের আবেদন এর আগে তিনবার খারিজ করেন পাটিয়ালা হাউস কোর্ট। গত সোমবার মামলাটি উঠলে দিল্লি পুলিশের বক্তব্য ছিল, অন্তঃসত্ত্বা বলেই কাউকে জামিন দিতে হবে, এমন যুক্তি অর্থহীন। গ্রহণযোগ্যও নয়। পুলিশের দাবি, গত ১০ বছরে তিহার জেলে ৩৯ জন নারী সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট সাফুরার সহপাঠীদের আবেদনে সাড়া দেন। আবেদনকারীদের আরজি ছিল, সাফুরার শারীরিক জটিলতা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিও মারাত্মক হয়ে উঠছে দিন দিন। স্বাস্থ্যগত কারণে তাই এই আবেদন মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করা হোক।

মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। মানবিক কারণে তিনি জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেননি। বিচারপতিকে তিনি বলেন, মানবিক কারণে আদালত জামিন দিতে পারেন। তবে এই সিদ্ধান্ত যেন দৃষ্টান্তস্বরূপ না হয়।

সাফুরাকে জামিন দেওয়া হয় ১০ হাজার রুপির ব্যক্তিগত বন্ডে। তাঁকে বলা হয়েছে, তদন্তকারী দলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখতে হবে। অনুমতি ছাড়া দিল্লির বাইরেও তিনি যেতে পারবেন না। জামিনের পর সাফুরার স্বামী সবুর সিরওয়াল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তাঁরা খুশি। আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ।

সাফুরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিন পেয়েছিলেন। কিন্তু ইউএপিএ মামলায় দিল্লি পুলিশ নতুনভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের অভিযোগ, সাফুরার দায়িত্ব ছিল নারী ও শিশুদের ভুল বুঝিয়ে শাহিনবাগের লাগোয়া জাফরাবাদে সিএএ–এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে শামিল করা। তিনি ছিলেন দাঙ্গার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *