লিওনেল মেসি হোন বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, অথবা মাঝে এক মৌসুমে জেতা লুকা মদরিচ…ব্যালন ডি’অর জেতা নিয়ে বিতর্ক হয়নি, গত কয়েক বছরে সম্ভবত এমন খুব একটা দেখা যায়নি। এ বছরেও ব্যতিক্রম হলো না। তবে সাধারণত বিতর্কটা যেখানে সংবাদমাধ্যম আর খেলোয়াড়দের সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে এত বছর, এখন সেটিতে যোগ দিচ্ছেন খেলোয়াড় নিজেই!
খেলোয়াড়ের নাম—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো!
গত পরশু ক্যারিয়ারের সপ্তম ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি। সে নিয়েও বিতর্ক আছে। তবে সে বিতর্কে এবার এত দিন পর্যন্ত রোনালদোর নাম এসেছে সামান্যই। বায়ার্ন মিউনিখের স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কির নাম সব সময়ই ছিল, শেষ দিকে এসে মাদ্রিদভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলোর পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদ ও ফ্রান্স জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত খেলোয়াড়েরা উঠেপড়ে লেগেছিলেন করিম বেনজেমার ব্যালন ডি’অর জেতার দাবি নিয়ে। কিন্তু পুরস্কারের শেষে এসে বিতর্কে জড়িয়ে গেল রোনালদোর নাম।
রোনালদোর অর্জনের পাশাপাশি মেসির কেন পুরস্কারটা জেতা উচিত হয়নি, এমন হিসাব টেনে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন এক রোনালদোভক্ত। সে পোস্টের নিচে রোনালদোর এক মন্তব্যেই তোলপাড় চলছে!

সিআরসেভেন লেন্ডারিও’ নামের সেই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে বিশাল পোস্টে যা লেখা হয়েছে, সেটিতে প্রথমে বছরে রোনালদোর কীর্তির বর্ণনা ছিল। বাংলায় অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায়, ‘এ বছরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যা করেছেন: কোপা ইতালিয়ানোর শিরোপা, ইতালিয়ান সুপার কাপের শিরোপা, ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতা, ইতালিয়ান লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা, ২০২০-২১ মৌসুমে জুভেন্টাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা, ২০২১–২২ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আনুষ্ঠানিক ম্যাচে গোলের হিসাবে ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন, জাতীয় দলের ইতিহাসেও হয়েছেন সেরা গোলদাতা।’
এরপর নিজের মতামতের ভিত্তিতে সেই ইনস্টাগ্রাম ইউজার লিখেছেন, ‘ইউরো ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পাশাপাশি টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সেরা অ্যাসিস্টও তিনি করেছেন।’
এরপর আবার নিজের মতো করে সংখ্যার বিবরণে নেমে গেলেন, ‘বছরে (রোনালদো) ৪৩ গোল করেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫ ম্যাচে করেছেন ৬ গোল। প্রতিটি গোলই ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। এমন একজন, যে কিনা এই বয়সে এসেও অবিশ্বাস্য কাণ্ডকীর্তি করে যাচ্ছেন, প্রায় সময়ই বিশ্বকে চমকে দিচ্ছেন…এমন একজনই (ব্যালন ডি’অরের ভোটে) কিনা হলেন ষষ্ঠ!’

এরপর রোনালদোর সঙ্গে শুধু লেভানডফস্কিই তুলনায় আসতে পারেন বলে দাবি করলেন ওই রোনালদো–ভক্ত, ‘আপনাদের সত্যিই মনে হয় যে পাঁচজন ফুটবলার এই বছরে তাঁর (রোনালদোর) চেয়ে বেশি ভালো করেছেন? কোনোভাবেই না! তিনি (রোনালদো) সহজেই পুরস্কারটার বিচারে থাকতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে (পুরস্কারের দৌড়ে) তাঁর সঙ্গে লেভানডফস্কির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারত, ব্যক্তিগতভাবে যাঁর রেকর্ড অবিশ্বাস্য ছিল। বায়ার্নের মৌসুমটা জুভেন্টাসের চেয়ে ভালো কেটেছে, ইউনাইটেডের চেয়ে বেশি ধারাবাহিক যাচ্ছে। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে রোনালদো (লেভানডফস্কির চেয়ে) অনেক অনেক ভালো করেছেন। কিন্তু সর্বশেষ পুরস্কারটা যাচ্ছে কার কাছে?’
এখান থেকে ওই রোনালদো ভক্তের শুরু হলো মেসির সমালোচনা, ‘মেসি, যিনি কিনা বার্সেলোনার জার্সিতে শুধু কোপা দেল রে জিতেছেন। ক্রিস্টিয়ানো (রোনালদো) রিয়াল ছাড়ার পর থেকে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে যাঁর গোল নেই, মৌসুমে বড় ম্যাচগুলোতে কিছু করতে পারেননি। কোপা আমেরিকা জিতেছেন, যেটা কিনা ৪ বছরে একবার হওয়ার কথা, কিন্তু বলতে গেলে প্রতিবছরই হয়। ফাইনাল বা সেমিফাইনালে গোল করতে পারেননি তিনি। পিএসজির হয়ে ব্যক্তিগতভাবেও বাজে একটা মৌসুম কাটাচ্ছেন তিনি।’
মেসি আর রোনালদোর ক্ষেত্রে পুরস্কারের মানদণ্ডটা অনেক উঁচুতে বাঁধা বলেও দাবি করলেন এই রোনালদো-ভক্ত। তাঁর মতে, রোনালদোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন—‘প্রশ্নাতীতভাবে পুরস্কারটা জেতার জন্য রোনালদোকে ৩০০ ভাগ দিতে হয়। তিনি বছরের সবচেয়ে সুন্দর বাইসাইকেল গোল করলেও লাভ নেই, ক্লাবের সবকিছুতে চ্যাম্পিয়ন হলেও লাভ হয় না, সব জায়গায় সেরা গোলদাতা হলেও বা বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করলেও তিনি পুরস্কার পান না।’ আর মেসির ক্ষেত্রে? রোনালদো-ভক্তের পোস্টে লেখা, ‘মেসির ক্ষেত্রে পুরো উল্টো। তাঁর মৌসুম খুব বাজে কাটলেও ওরা তাঁকে ওপরে উঠিয়ে পুরস্কারটা দেওয়ার কোনো না কোনো উপায় খুঁজে নেয়।’