অবশেষে পাঠাও-এর ফাহিম-রহস্য উদঘাটন!

পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা তরুণ উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহকে হত্যার ঘটনায় তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে নিউইয়র্কের পুলিশ। স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, ফাহিম সালেহর বোন যখন ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকছিলেন, হত্যাকারী তখন লাশ টুকরা করছিলেন।

 

মার্কিন দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম টেরেস ডেভোন হাসপিল। ২১ বছর বয়সী এই তরুণের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে এই গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানোর কথা রয়েছে।

 

ম্যানহাটানে নিজের কেনা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ফাহিম সালেহর লাশ উদ্ধার করা হয়। ইলেকট্রিক করাত দিয়ে তাঁর লাশ টুকরা টুকরা করে প্লাস্টিকে ব্যাগে ভরানো ছিল।  গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, ফাহিম সালেহকে স্থানীয় সময় সোমবার কোনো এক সময়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী ওই দিন চলে যাওয়ার পরদিন মঙ্গলবার আবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসেন। এরপর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে মরদেহ টুকরা করে বড় আকারের ব্যাগে ভরে ফেলেন। হত্যার আলামত মুছে ফেলারও চেষ্টা করেন।

 

তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকারী যখন ফাহিম সালেহর শরীর টুকরা টুকরা করে ব্যাগে ভরছিলেন, তখন তাঁর বোন ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকছিলেন। অ্যাপার্টমেন্টের লবিতে পৌঁছালে হত্যাকারী বিষয়টি টের পান, তখন অ্যাপার্টমেন্টের পেছনের দরজা ও সিঁড়ি দিয়ে হত্যাকারী বেরিয়ে যান।

 

ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। তাঁর বাবা সালেহ উদ্দিন চট্টগ্রামের, আর মা নোয়াখালীর মানুষ। ফাহিম পড়াশোনা করেছেন আমেরিকার বেন্টলি ইউনিভার্সিটিতে ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে। তিনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা। ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় এসে পাঠাও চালু করে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন তিনি। ফাহিম নাইজেরিয়া ও কলম্বিয়ায় এমন আরও দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানির মালিক। ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশেও তিনি ব্যবসা বিস্তৃত করেছিলেন।

পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ টাকার জন্য নিজের সাবেক সহকারীর কাছে খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ। টাইরেস ডিভন হাসপিল নামের ওই সহকারীকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ। গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী হাসপিল, ফাহিমের কাছ থেকে ১০ হাজার ডলার চুরি করেছিল। আর ওই চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতেই হত্যা করা হয় ফাহিম সালেহকে।

মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছিলেন পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ। নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে নজর কেড়েছিলেন অনেকের। কিন্তু প্রতিহিংসার কাছে হার মানতে হলো প্রতিভাবান এই তরুণ উদ্যোক্তাকে। ফাহিমের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার সকালে তার সাবেক সহকারী টাইরেস ডিভন হাসপিলকে গ্রেফতার করে নিউইয়র্ক পুলিশ। এরপরই গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে একের পর এক তথ্য প্রকাশ করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যম। জানা গেছে, ফাহিমের দশ হাজার ডলার চুরি করেন হাসপিল। তবে অর্থ চুরি বিষয়টি নজরে আসার পর প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেননি ফাহিম। বরং টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য হসপিলকে প্রস্তাব দেন।

 

রহস্যময় এই হত্যার তদন্তের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার জানান, সোমবারই ফাহিমকে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ গায়েব করতে মঙ্গলবার আবারো তার অ্যাপার্টমেন্টে যান হত্যাকারী। সেদিন তার মরদেহ ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে টুকরো করে একটি ব্যাগে ভরেন এবং কিছু অংশ অ্যাপার্টমেন্টের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রাখেন। মঙ্গলবার বোনের ফোন কল পেয়ে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ফাহিমের মরহদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *