নাগর্নো-কারাবাখ একটি বিতর্কিত অঞ্চল, আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত, কিন্তু অধিকাংশ অঞ্চলটি আর্টসাক প্রজাতন্ত্রের কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় (পূর্বে নাগর্নো-কারাবাখ প্রজাতন্ত্র), একটি আর্মেনিয়ান জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র যেটি আজারবাইজান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের নাগর্নো-কারাবাখ স্বায়ত্তশাসিত এলাকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৮ সালে কারাবাখ আন্দোলনের সূচনা হওয়ার পর থেকে আজারবাইজান এই অঞ্চলে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারেনি। ১৯৯৪ সালে নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান সরকারের প্রতিনিধিরা এই অঞ্চলের বিতর্কিত অবস্থান সম্পর্কে ওএসসিই মিনস্ক গ্রুপের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা করছে।
সাবেক দুই সোভিয়েত রাষ্ট্র আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিতরের দুইটি অঞ্চল ছিল। সোভিয়েতের পতনের পর এই দুইটি রাষ্ট্র আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু সীমান্তের নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। আজারবাইজানের অভিযোগ, বোইনি ভাবে ওই অঞ্চলের দখল রেখেছে আর্মেনিয়া। আর্মেনিয়ার বক্তব্য, নাগর্নো-কারাবাখ মুক্তাঞ্চল। বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরই দখলে রয়েছে এলাকা।
২০১৬ সালে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান সীমান্তে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে শেষ বড়সড় সংঘর্ষ হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে। ২০১৬ সালে ওই এলাকায় সংঘর্ষে ১১০ জন নিহত হয়েছিলেন। রোববার ফের ওই অঞ্চলের দখল নিয়ে দুই দেশ কার্যত যুদ্ধে নেমে পড়েছে। দুই দেশের সেনাই সীমান্তে জড়ো হয়েছে। লাগাতার গোলাগুলি চলছে।
শুধু তাই নয়, এর মধ্যে নাগর্নো-কারাবাখ মুক্তাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধারাও রয়েছে। এখনো পর্যন্ত যুদ্ধে তাদেরই সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। যোদ্ধাদের সূত্র জানিয়েছে, শুধুমাত্র সোমবারের লড়াইয়ে তাদের ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার এবং সোমবার মিলিয়ে নিহত হয়েছেন ৮৪ জন।
তুরস্ক আজারবাইজানকে সমর্থন দিলেও ওই অঞ্চলে তাদের মিত্র রাশিয়ার আর্মেনিয়ায় একটি সেনাঘাঁটি আছে। দুই দেশের লড়াইয়ে তুরস্ক ইন্ধন দিচ্ছে বলে কোনো কোনো মহল মনে করছে।
আজারবাইজান ৮৬৬০০ বর্গ কিলোমিটারের একটি ছোট দেশ যার লোকসংখ্যা ৯৭১৩৫০০। অপরপক্ষে আর্মেনিয়ার আয়তন ২৯৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এবং মোট জনসংখ্যা ২৯৯৮৬০০।
আজারবাইজানের মোট সক্রিয় সেনাপতি ৬৬৯৪০, যেখানে আর্মেনিয়ার ৪৫০০০। রিজার্ভ সৈন্যসংখ্যাও আজাবাইজানের বেশি। আজেরি রিজার্ভ সৈন্য আছে ৩০০০০০ জন যেখানে আর্মেনিয়ার মাত্র ২১০০০০ জন। আজারবাইজানের ৩০ লক্ষ সদস্য মিলিটারি সার্ভিসের জন্য প্রস্তুত আছে যেখানে আর্মেনিয়ার মাত্র ৮ লক্ষ ৯ হাজার।
যুদ্ধের জন্য ট্যাংক সংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আজারবাইজানের ট্যাংক আছে ৬৬৫ টি যেখানে আর্মেনিয়ার ৫২৯ টি। তবে যুদ্ধের সাঁজোয়া যান আর্মেনিয়ার ১৬৩৭, যেখানে আর্মেনিয়ার মাত্র ১০০০ টি।
আজারবাইজানের আর্টিলারি ৭৪০টি। এখানেও পিছিয়ে আর্মেনিয়া। তাদের আছে মাত্র ২৯৩ টি। স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি আছে আজারবাইজানের ২৩৭ টি যেখানে আর্মেনিয়ার মাত্র ৩৮ টি। আর্মেনিয়ার রকেট আর্টিলারি আছে ১০৫ টি। এক্ষেত্রেও ১৯৬ টি রকেট আর্টিলারি নিয়ে এগিয়ে আজারবাইজান।
বিমান বাহিনীতে আজারবাইজানের এয়ারক্রাফট আছে ১২৭ টি, আর্মেনিয়ার ৬৫ টি। আর্মেনিয়ার ফাইটার এয়ারক্রাফট না থাকলেও আজারবাইজানের আছে ৫ টি। তবে অ্যাটাক এয়ারক্রাফট আর্মেনিয়ার ১৬ টি, যেখানে আজারবাইজানের ১১ টি। আর্মেনিয়ার মাল্টিপারপাস এয়ারক্রাফট না থাকলেও আজারবাইজানের ১৩ টি। হেলিকপ্টার আছে আজারবাইজানের ৭৫ টি, আর্মেনিয়ার ৪২ টি।সামরিক শক্তির বিচারে ঢের এগিয়ে আজারবাইজান।