করোনাভাইরাস (COVID-19)
করোনাভাইরাস (SARS-CoV-2) ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হয়। এটি দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের মার্চ মাসে এটিকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে।
এর প্রধান উপসর্গগুলো হলো জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। তবে অনেক ক্ষেত্রেই উপসর্গহীন সংক্রমণ ঘটে। এটি মূলত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এবং স্পর্শে ছড়ায়।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭৫ কোটিরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন।
করোনাভাইরাসের মাইক্রোস্কোপিক ছবি
প্রতিরোধ:
• মাস্ক ব্যবহার
• সামাজিক দূরত্ব
• হাত ধোয়া
• টিকা গ্রহণ
১. স্প্যানিশ ফ্লু (Spanish Flu) – ১৯১৮
স্প্যানিশ ফ্লুর সময় হাসপাতালের ছবি]
১৯১৮ সালে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া স্প্যানিশ ফ্লু ছিল ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর মহামারী। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটি রূপ (H1N1) ছিল।
এই ভাইরাসে প্রায় ৫০ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় এবং আনুমানিক ৫ কোটির মতো মৃত্যু ঘটে। মূলত তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা বেশি আক্রান্ত হন, যা সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার বিপরীত।
বৈশিষ্ট্য:
• খুব দ্রুত ছড়ানো
• ফুসফুসে জটিল সংক্রমণ
• বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তোলে
২. এইচআইভি/এইডস (HIV/AIDS)
HIV ভাইরাসের চিত্র
এইডস (AIDS) একটি দীর্ঘস্থায়ী মহামারী যা এখনও বিদ্যমান। এটি এইচআইভি (HIV) ভাইরাসের মাধ্যমে হয়, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে ফেলে।
প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৮১ সালে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি মানুষ এই রোগে মারা গেছেন এবং আরও কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত।
সংক্রমণের পথ:
• রক্ত সংস্পর্শ
• যৌন সম্পর্ক
• মায়ের দুধ বা গর্ভকালীন সংক্রমণ
প্রতিরোধ:
• নিরাপদ যৌন সম্পর্ক
• একক সূচ ব্যবহার
• নিয়মিত পরীক্ষা এবং চিকিৎসা গ্রহণ
৩. ইবোলা ভাইরাস (Ebola Virus) ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত এলাকার ছবি
ইবোলা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৭৬ সালে আফ্রিকার কঙ্গো ও সুদান অঞ্চলে। এর মৃত্যুহার ২৫%-৯০% এর মধ্যে, যা একে অন্যতম মারাত্মক ভাইরাস করে তোলে।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে রক্তপাত, বমি, ডায়রিয়া এবং অঙ্গ বিকল হতে পারে।
মারাত্মক প্রাদুর্ভাব:
• ২০১৪-২০১৬ সালে পশ্চিম আফ্রিকায়
• প্রায় ২৮,০০০ সংক্রমণ ও ১১,০০০ মৃত্যু
প্রতিরোধ:
• আক্রান্তদের থেকে দূরত্ব
• নিরাপদ দাফন প্রথা
• স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই ব্যবহার
৪. সার্স (SARS – Severe Acute Respiratory Syndrome) সার্স ভাইরাসের ইলাস্ট্রেশন
সার্স হলো করোনাভাইরাস পরিবারেরই আরেক সদস্য। ২০০২ সালে চীনে প্রথম শনাক্ত হয় এবং দ্রুত বিশ্বের ২৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মূলত বাদুর এবং সিভেট নামক প্রাণী থেকে মানুষের মাঝে সংক্রমিত হয়।
মোট আক্রান্ত প্রায় ৮,০০০ জন এবং মৃত্যু ঘটে প্রায় ৭৭৫ জনের। যদিও এটি করোনা ভাইরাসের মতো অতটা ব্যাপক হয়নি, তবে এর দ্রুত সংক্রমণ ক্ষমতা এবং মারাত্মক উপসর্গ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
• কড়া কোয়ারেন্টাইন
• স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ
• জনসমাগমে বিধিনিষেধ
উপসংহার
ভাইরাস একটি অদৃশ্য শত্রু যা মানবজাতিকে বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। করোনা মহামারী আমাদের শিখিয়েছে যে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা ছাড়া মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করা অসম্ভব।
ইতিহাসের চারটি মারাত্মক ভাইরাস—স্প্যানিশ ফ্লু, এইডস, ইবোলা এবং সার্স—এটিই প্রমাণ করে যে, ভবিষ্যতের ভাইরাস মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই।