সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের কাছে করোনা নয়, ক্ষুধাই বড় আতঙ্কের নাম। এ অবস্থায় কাজ হারানো মানুষের জন্য বাজারের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম দামে পণ্যের দোকান নিয়ে বসেছে ‘হাসিমুখ’ নামে তরুণ-যুবকদের ফেসবুকভিত্তিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ দোকান থেকে অর্ধেক দামে খাদ্যপণ্য কিনতে পারছেন অসহায় মানুষ। আবার যাঁদের টাকা নেই, তাঁদের বিনা মূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
চলতি মাসের ২ জুলাই দোকানটি বসানো হয়েছে ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তার সমবায় মার্কেট চত্বরে। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই দোকান চালু থাকে। সেখানে বাজারের চেয়ে অর্ধেক দামে চাল, ডাল, চিনি, লবণ, আলু, ডিম, সয়াবিন তেল, সাবান, তরিতরকারিসহ বিভিন্ন পণ্য অসহায় ব্যক্তিদের বাজারের থলেতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই দোকানের নাম দিয়েছেন ভর্তুকির দোকান। এ দোকান অসহায় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন এখানে থেকে শতাধিক মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২ কেজি চাল, ৫০০ গ্রাম ডাল, ৫০০ গ্রাম তেল, ১ কেজি আলু, ৫০০ গ্রাম পেঁয়াজ, পটোল, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, কাঁচা মরিচ, ২৫০ গ্রাম আদা, ২৫০ গ্রাম রসুন, ৫০০ গ্রাম লবণ, ৪টা ডিম, ২টি সাবানসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন। এখানে লেবু ও সাধারণ কিছু ওষুধ বিতরণ করা হয় বিনা মূল্যে। ওষুধের জন্য তাঁদের চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র সঙ্গে আনতে হয়। অর্ধেক দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য কিনতে পেরে হাসি ফুটেছে অসহায় মানুষের মুখে।
ভর্তুকি দোকানে পণ্য কিনতে এসেছেন শহরের রিকশাচালক আল আমিন (৫২)। তিনি বললেন, করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সব বন্ধ। এ অবস্থায় তাঁদের আয়ও বন্ধ। বাড়িতে বসে থেকে হাতের জমানো টাকাও শেষের পথে। অর্ধেক দামে চাল, ডাল, ডিম, সবজি কিনতে পেরে তিনি উপকৃত হয়েছেন।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমরা কাজ করে যাব। পাশে থাকব অসহায় মানুষের। করোনা বিদায় নিলেও আমরা এভাবেই মানুষের পাশে থেকে যেতে চাই।’
স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে শিশুবান্ধব পদে কাজ করতেন রওশন আরা (৪৭)। বছরখানেক ধরে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। ধারদেনা করে চলছে তাঁর সংসার। হাসিমুখের দোকানে বাজার করতেএসে তিনি বেজায় খুশি। বললেন, ‘কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না। কেবল হাসিমুখ আমদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখে হাসি এনে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

’