জীবিকার জন্য জীবন দেওয়া আর কত দিন

শিল্পকারখানায় আবারও ঘটল বড় ধরনের দুর্ঘটনা। হাসেম ফুডসের কারখানায় আগুন লেগেছিল, আর সেখানে আটকে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫২ জন শ্রমিক (শিশু-কিশোরসমেত)। মালিকপক্ষ বলছে, আমরা তো আগুন লাগাইনি। তা স্বীকার করা যেতে পারে। তবে দাহ্য পদার্থ কর্মস্থলে রাখা, দরজায় তালা লাগিয়ে রাখা—এগুলো কি অন্য কেউ করেছিল? এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার জন্য যথানিয়মে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। তবে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এ ধরনের কথা এখনো শুনিনি। হয়তো শুনব।

একদিকে শ্রমিকের মজুরির ওপর থাকে চাপ, যাতে সে অংশের খরচ যথাসম্ভব কম রাখা যায়। এটি শুধু যে বাংলাদেশেই হচ্ছে, তা নয়, সারা বিশ্বেই কয়েক দশক ধরে মূল্য সংযোজনে শ্রমের অংশ কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশের শিল্প খাতে শ্রমের প্রকৃত মজুরি (অর্থাৎ অর্থ মজুরি এবং ভোগ্যপণ্যের দাম বিবেচনায় নিয়ে যা দাঁড়ায়) কোনো কোনো বছর বাড়লেও ২০২০ সালে ছিল নিম্নমুখী।

প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য শুধু যে মজুরি কম রাখা হয়, তা-ই নয়, কারখানার নিরাপত্তাজনিত মান এবং কর্মপরিবেশের দিকও অবহেলিত হয়। ভবনের নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ওঠানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ নিতে হয়, তার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয় বলে সেগুলোকে দেখা হয় প্রতিযোগিতার সক্ষমতার পরিপন্থী হিসেবে। আর তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চালানো হয় উৎপাদন কর্মকাণ্ড। ফলে, ঘটে যাচ্ছে একের পর এক দুর্ঘটনা। তাজরীন ফ্যাশনস আর রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনার কথা এখনো মনে রাখা হয়, কারণ সেগুলো ঘটেছিল রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে। কিন্তু এ ছাড়া আরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে এবং এখনো ঘটছে, যেগুলোর কথা কিছুদিন গণমাধ্যমে থাকে, তারপর হারিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *