দেশে যখন সরকারিভাবে পাটের কারখানাগুলো প্রায় বন্ধ, তখন পাটের ঐতিহ্য ধরে রেখে দেশীয় এ সম্পদকে আরো শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে মফস্বলের একটি গ্রামে পাট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পায়ের ব্যবহার উপযোগী জুতা। এখানে তৈরি জুতা ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ চীন ও জাপানেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
খুব অল্প সময়ে হাতে তৈরি এই জুতার ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এসব জুতা তৈরির কাজ করছেন স্থানীয় প্রায় ৪০০ নারী। ফলে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে এসব নারীদের পরিবার। দেশের ঐতিহ্য এ পাট দিয়ে জুতা তৈরি করছে এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিডেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবাইদুল হক রাসেল জানান, পড়াশোনা শেষ করে তিনি নিজে কিছু করতে চেয়েছিলেন। ঢাকায় প্রথম গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ২০১৬ সালের দিকে এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার আগ্রহ নিয়ে এবং দেশের পাট শিল্পকে বিশ্বের তুলে ধরার জন্য আগ্রহ দেখান। এরপর কালীগঞ্জ উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের রঘুনাথপুর বাজারের পাশে ৪৪ শতক জমি কিনে পাটের জুতা তৈরির কারখানা তৈরি করেন। দেশ এবং বিদেশ থেকে কিছু মেশিন সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন পাটের কারখানা থেকে কাচা মাল ক্রয় করে এনে এখানে পাটের জুতা তৈরি শুরু করেন। তার উৎপাদিত পাটের জুতা ইউরোপ আমেরিকাসহ চীন এবং জাপানে রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে এখানকার উৎপাদিত পাটের জুতা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছে। তার কারখানায় ৮০ জন নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এছাড়াও এলাকার প্রায় ৪শ নারী এখান থেকে কাজ নিয়ে গিয়ে বাড়িতে বসে কাজ করে। তাদের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ দ্ওেয়া হয়। প্রতি জোড়া জুতায় জন্য তারা বিল পেয়ে থাকেন। একে জন নারী বাড়ির অন্য কাজের পাশাপাশি হাতে এই জুতা তৈরি করে মাসে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। এখানকার তৈরি জুতা ২ থেকে ১৫ ডলার পর্যন্ত রেটে জুতা বিক্রি করেন। ইতিমধ্যে আমার কারখানায় উৎপাদিত পাটের জুতা দিয়ে প্যারিসে কয়েকটি ফ্যাশন শো হয়েছে। তিনি বলেন, নিজেই এই জুতার মার্কেটিং করেন। নিজেই বায়ারদের সাথে কথা বলেন এবং রফতানি করেন। পাটের জুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে উন্নত বিশ্বে যোগ করেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেডের ম্যানেজার মাসুদ রানা জানান, এই কারখানায় ৬টি ধাপে একটি জুতা তৈরি করা হয়। সোল্ড তৈরি হয় রাবার দিয়ে। জুতার বাকি অংশ তৈরি হয় পাট দিয়ে। আর এই কাজ গুলো সম্পুর্ণ হাতের মাধ্যমে করা হয়। প্রতিমাসে তাদের কারখানা থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার জুতা রফতানি করা হচ্ছে। এই জুতার বৈশিষ্ট হলো ব্যাবহারের পরে ফেলে রাখলে এটি মাটির সাথে মিশে যায়। ফলে এটি সম্পুর্ন পরিবেশবান্ধব।