এক মাস হয়েই গেল! লিওনেল মেসি বার্সেলোনার আর কেউ নন, এটা ৫ আগস্টই জানিয়ে দিয়েছিলেন হোয়ান লাপোর্তা। লা লিগার বেতনসীমার নিয়ম মেনে মেসিকে যে ধরে রাখা সম্ভব নয়, সেটি সেদিনই জানিয়ে দিয়েছিল বার্সেলোনা। তিন দিন পর অশ্রুভেজা চোখে বার্সেলোনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলে দিয়েছেন মেসি। আর দুই দিন পরই এল সে খবর। এখন থেকে ‘মেসি আমাদের’—এটা বলার অধিকার পেয়ে গেছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)।
মেসির প্যারিস যাত্রার এক মাস পূর্ণ হয়ে গেছে। এর মধ্যেই পিএসজির সমর্থকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় পর্ব শেষ হয়েছে তাঁর। পিএসজির জার্সিতে মাঠে নেমেছেন, গোল করেছেন। এখনো থিতু হয়েছেন বলা যাচ্ছে না। বাড়ি কেনা বা ভাড়া এখনো নেওয়া হয়নি। স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বিলাসবহুল এক হোটেলকে আবাসস্থল বানিয়েছেন। ২০০১ সাল থেকে কাতালুনিয়াকেই নিজের ঘর ভাবা মেসির প্যারিস বাসের এক মাস পূর্তির পর আবার একটু ফিরে দেখার ইচ্ছা হলো গিয়েম বালাগের।

স্কাই স্পোর্টস, এএস ও বিবিসির পরিচিত মুখ এই কাতালান সাংবাদিক। বার্সেলোনার স্বর্ণযুগ থেকেই পেপ গার্দিওলা, মেসিদের অনুসরণ করে আসছে্ন। তাঁদের নিয়ে বই লিখেছেন। পরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও মরিসিও পচেত্তিনোকে নিয়ে বই লিখেছেন। বার্সেলোনায় মেসির শেষ সময় আর প্যারিস যাত্রাও দেখেছেন খুব কাছ থেকে। তাঁর দৃষ্টিতে প্যারিসে মেসির প্রথম মাস কেমন গেল, বিবিসির কলামে সেটা তুলে ধরেছেন বালাগ। সেটাই প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
মেসির চুক্তির খবর যেদিন ঘোষণা করা হলো, পিএসজির ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্য মেসির নাম লেখা দেড় লাখ জার্সি রাখা হয়েছিল। সাত মিনিটে সব শেষ হয়ে গেল।
এমন কিছু পিএসজি আগেও দেখেছে, চার বছর আগে নেইমারকে যখন নিয়েছিল তারা। তবে আর্জেন্টিনার মহাতারকা মেসির আবির্ভাব নিয়ে যে উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল, তাতে পিএসজিও চমকে গিয়েছিল।
যাঁকে নিয়ে এত উত্তেজনা, তাঁর জন্য এটা একদম নতুন এক অভিজ্ঞতা। বার্সেলোনায় যখন যোগ দিয়েছিলেন, তখন ১৩ বছরের এক বালক ছিলেন। এখন ৩৪ বছর বয়সে এসে পরিবার নিয়ে এমন এক শহরে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, যেখানে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এসেছিলেন। সেবার তাঁর আগমনের হেতু, ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অরটা বুঝে নেওয়া।
আগস্টে প্যারিসে নামার পর থেকেই পিএসজির সবাই মিলে তাঁকে স্বাগত জানানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আন্দের এরেরার ঘরে একটি জমায়েতের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে তাঁর জন্মদিনে সবাই বারবিকিউর আয়োজন করেছিলেন। এবং প্রথম দিন থেকে ড্রেসিংরুমের সমর্থন টের পেয়েছেন মেসি।

স্পেনে যাঁর সঙ্গে হরহামেশা টক্কর চলত, রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক ডিফেন্ডার সের্হিও রামোস খুব দ্রুত তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। এবং চুক্তি করার আগেই এ ব্যাপারে আনহেল দি মারিয়া, নেইমার ও লিয়ান্দ্রো পারেদেসের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে নিয়েছিলেন মেসি।
নেইমার তো তাঁকে রাজি করানোর জন্য ১০ নম্বর জার্সিও ছেড়ে দিতে চেয়েছেন। মেসি অবশ্য সে প্রস্তাবে রাজি হননি, কিশোর বয়সে বার্সেলোনায় অভিষেকের সময় পরা ৩০ নম্বর জার্সিই বেছে নিয়েছেন।
দারুণ স্প্যানিশ বলা কিলিয়ান এমবাপ্পের উষ্ণ অভ্যর্থনা ও দলের ভাঁড় হিসেবে পরিচিত মার্কো ভেরাত্তির আচরণেও আনন্দ পেয়েছেন মেসি।
পিএসজি কোচ স্বদেশি মরিসিও পচেত্তিনোর সঙ্গে মেসির অতীতের সুসম্পর্কও এই দলবদলকে বেশ আকর্ষণীয় মনে করাতে ভূমিকা রেখেছে। তাঁরা একে অপরকে বোঝেন, বাস্তবে ও রূপকভাবে একই ভাষায় কথা বলেন এবং মেসির বার্সেলোনা থেকে বিদায়ের খবর আসার ঠিক আগমুহূর্তে ফোনে কথা বলেছেন দুজন। দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন কিছু না।
পিএসজির অনুশীলনে মেসিকে জিমের কিছু যন্ত্র দেখানোর দায়িত্ব নিয়েছিল সেবাস্তিয়ান পচেত্তিনো। কোচের ছেলেকে এ কাজ করতে দেখে মেসি বিস্মিত হয়েছেন। প্রথমত, সর্বশেষ বার্সেলোনায় যখন দেখা হয়েছিল, তখন পুরো ঘরে ছোটাছুটিতে ব্যস্ত ছিল সেবাস্তিয়ান। সেই ছেলেই এখন অনুশীলনের দায়িত্ব পেয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, ওই যন্ত্র দিয়ে কী করতে হয়, সেটা মেসি জানেন না। হ্যাঁ, বার্সেলোনাতেও এটা দেখেছিলেন, কিন্তু তাঁকে কখনো এই যন্ত্র ব্যবহার করতে বলা হয়নি সেখানে।
মেসির জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে, তার আরেকটি উদাহরণ এটি। কিন্তু মাঠে সবকিছু অনেকটা আগের মতোই। ২৯ আগস্ট রাসের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ের ম্যাচ থেকেই মনে হচ্ছে পিএসজি তাঁকে কেন্দ্র করেই খেলছে। আক্রমণের সময় ডান প্রান্তে তাঁর কোনাকুনি দৌড়ের অপেক্ষায় থাকে তারা। ছোট ছোট পাসে এগোতে থাকে, একদম শেষ মুহূর্তে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে।