মিনহাজের পড়াশোনা যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে, ভিড়েছিলেন সিরিয়ায় জঙ্গিদের দলে

আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর দলে ভিড়ে সিরিয়ায় চলে গিয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিনহাজ হোসেন (৩৮)। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে দারুস সালামের কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একটি দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ বলছে, মিনহাজ হোসেন উগ্রবাদে দীক্ষিত হয়ে সিরিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে দলটির আমন্ত্রণে সিরিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। তিনি বেশ কিছুদিন তুরস্কে অবস্থান করেন এবং তারপর সিরিয়ায় চলে যান।

সেখানে গিয়ে এইচটিএস নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে ব্যর্থ হন মিনহাজ। মাস তিনেক পর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকা থেকে খুলনায় চলে যান এবং নব্য জেএমবির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কারও কারও সঙ্গে তিনি কথা বলতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেও জেনেছে পুলিশ।

জানা গেছে, এইচটিএস অপেক্ষাকৃত নতুন একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী, এর উত্থান ২০১৭ সালে। সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাতে এই গোষ্ঠী সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিনহাজ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য।

নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ঢাকাকে বেছে নিয়েছিলেন মিনহাজ ও তাঁর সঙ্গীরা।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মিনহাজ অতি সম্প্রতি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

করোনার সময় জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বাড়ে এবং তিনি দেশ ছাড়েন।
মিনহাজ হোসেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

জাতিগতভাবে বাংলাদেশি হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন পাকিস্তানে। পুলিশ জানায়, মিনহাজের মা পাকিস্তানে চাকরি করতেন। বাবা থাকতেন ঢাকার মালিবাগে। পরে মায়ের সঙ্গে তিনি পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যে চলে যান। পিএইচডি শেষে তিনি বাংলাদেশে ফেরেন ২০১৭ সালে।

sleep

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মিনহাজ লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে স্নাতক পাস করেছেন, স্নাতকোত্তর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটিতে। তাঁর পিএইচডি ব্রুনেই দারুসসালামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

তিনি অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডারশিপের একজন ফেলো। তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা তিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মিনহাজ হোসেন কলেজ অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিক্ষক ছিলেন। ওই বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাসের বেশি সময় আগে মিনহাজ চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর কী ঘটেছে তিনি জানেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *