যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টাচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ও দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোতে সম্প্রতি লোকজনের স্থানান্তর ঘটছে। উদারনৈতিক রাজ্যগুলো থেকে অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল রাজ্যের দিকে মানুষের এই স্থানান্তরের চিত্র ধরা পড়েছে সর্বশেষ জাতীয় পরিসংখ্যানের ফলাফলে। গত ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২৬ এপ্রিল মার্কিন সেনসাস ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যা এখন ৩৩ কোটি ১৪ লাখের কিছু বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের জন স্থানান্তরের সঙ্গে দেশটির রাজনীতি এবং অর্থনীতির নানা হিসেবে নির্ভর করে। জনসংখ্যার অনুপাতে কংগ্রেসের আসন বণ্টন হয়ে থাকে। সর্বশেষ জনসংখ্যার হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, ইলিনয়, মিশিগান, ওহাইও, পেনসিলভানিয়া এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার মতো রাজ্যগুলো থেকে প্রতিনিধি পরিষদে আসনসংখ্যা একটি করে কমেছে।

নতুন জনবিন্যাসে কংগ্রেসে আসনসংখ্যা বাড়ছে টেক্সাসের ক্ষেত্রে দুটি এবং কলোরাডো, ফ্লোরিডা, মনটানা, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ওরেগন রাজ্যে একটি করে আসন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি ১০ বছর পর পর জাতীয়ভাবে পরিসংখ্যান গ্রহণ করা হয়।

মার্কিন সংবিধানে বলা আছে, প্রতিটি রাজ্যে থেকে প্রতিনিধি পরিষদে কমপক্ষে একটি আসন থাকতে হবে। বাকিটা মোট জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনে ভাগ করে দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল রাজ্যগুলোর দিকে আমেরিকানদের বেশি স্থানান্তর ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের গত ১৭০ বছরের ইতিহাসে এবারেই প্রথম ক্যালিফোর্নিয়ার মতো জনবহুল রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদে একটি আসন কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রাজনীতির ক্ষেত্রে রক্ষণশীল রাজ্যের দিকে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের এ স্থানান্তর অনেকটাই দৃশ্যমান। এ পরিবর্তনকে রিপাবলিকান দলে তাদের রাজনৈতিক আনুকূল্য হিসেবে দেখার সুযোগ রয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনেই এর একটা ফল দেখা যেতে পারে। মানচিত্রে লাল রঙের রাজ্যগুলোতে প্রতিনিধি পরিষদের আসনসংখ্যা বৃদ্ধি মানেই রিপাবলিকানদের নিশ্চিত আসন বৃদ্ধি।

যদিও এ আপাত স্থানান্তরের চিত্রে রিপাবলিকানদের সুখবোধের কোনো কারণ নেই। রিপাবলিকান রাজ্য বলে পরিচিত বেশ কিছু রাজ্যে দলটি সাম্প্রতিক সময়ে ভিত হারাচ্ছে। ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য হিসেবে গত নির্বাচনে যেসব রাজ্য আলোচিত হয়েছে সেসব রাজ্যে যুব-তরুণদের ব্যাপক স্থানান্তর ঘটছে। বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ এবং বাদামি চামড়ার লোকজনের এ স্থানান্তর ভবিষ্যতে রাজ্যগুলোকে রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠ হিসেবে গড়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ ও পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে অভিবাসীদের স্থানান্তর বাড়লে ডেমোক্রেটিক দলের পাল্লা ভারী হয়ে উঠবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

টেক্সাসের মতো বড় রাজ্যকে এক সময় রিপাবলিকানদের ঘাঁটি মনে করা হতো। এখনো রাজ্যটি রাজনৈতিকভাবে লাল রঙের থাকলেও অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। বিপুলসংখ্যক অভিবাসীদের স্থানান্তরের কারণে রাজ্যটি ক্রমেই ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ঝুঁকছে।

জন স্থানান্তরের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির মানচিত্রই শুধু পালটে যায় এমন নয়। প্রতি ১০ বছর পর পর এমন লোক গণনার ওপর ভিত্তি করে ফেডারেল অর্থ বণ্টন করা হয়। ফেডারেল তহবিলের দেড় ট্রিলিয়ন ডলার রাজ্যগুলোতে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতি বছর বণ্টন করা হয়ে থাকে।

যেসব রাজ্যে লোকজনের সংখ্যা কমেছে, স্বভাবতই সেসব রাজ্য জন অনুপাতে ফেডারেল বরাদ্দ পাবে। সর্বশেষ লোক গণনার হিসেবে নিউইয়র্কের মতো রাজ্যে ফেডারেল অনুদানের পরিমাণ এখন আনুপাতিক হারে কমে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *