অন্য সব দিনের মতোই গত ২৭ জুন ভিক্টর মারকোপোলোস গুগলে কিছু খুঁজছিলেন। হঠাৎ তাঁর মনে হয়, কোথাও একটা ঘাপলা হচ্ছে। নেহাত কৌতূহল থেকে ইউআরএলে একটা শব্দ বদলে দেন ভিক্টর। প্রথমে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য তাঁর স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। পরে স্রোতের মতো ব্যক্তিগত তথ্য এসে জমা হতে থাকে।
দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটির ইনফরমেশন সিকিউরিটি কনসালট্যান্ট ভিক্টর ৯ জুলাই রাতে প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন।
ভিক্টর বলেন, ‘আমি কখনো এত বড় তথ্য ফাঁসের ঘটনার মুখোমুখি হইনি। আমার পর্যালোচনা বলে, প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে। এই মানুষগুলো নানাভাবে ক্ষতির শিকার হলেন।’
ভিক্টর আরও বলেন, তথ্য ফাঁসের বিষয়টি দেখতে পেয়ে তিনি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
ব্যক্তিগত তথ্য বলতে বোঝায়, মানুষের নাম, ঠিকানা, জন্মনিবন্ধন, মুঠোফোন–পাসপোর্ট নম্বর, আঙুলের ছাপসহ বিভিন্ন তথ্য, যা দিয়ে তাঁকে শনাক্ত করা যায়। এসব তথ্য বেহাত হলে প্রতারণা ও অপরাধের ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের তথ্য ফাঁসের যে বিষয় ভিক্টরের কাছে ধরা পড়েছে, তা নিয়ে ৭ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের একটি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন ওয়েবসাইট থেকে তথ্যগুলো ফাঁস হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি টেকক্রাঞ্চ। এ বিষয়ে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববার দিনভর নানা মহলে আলোচনা হয়।
এ নিয়ে গতকাল বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন করেন নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর। তার আগে সরকারের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আইসিটি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রকল্প বিজিডি ই-গভ সার্ট সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। সরকারের তিনটি পক্ষের কোনোটিই এখন পর্যন্ত কোন সংস্থার গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা দেয়নি।